হবিগঞ্জে বেত্রাঘাতের শিকার নারী গ্রামছাড়া, মামলা প্রত্যাহারের জন্য ‘চাপ’

নারী নির্যাতন
প্রতীকী ছবি

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপের শিকার সেই নারী (৩০) এখন গ্রামছাড়া। ওই ঘটনায় মামলা করার পর থেকে বাদী ও তাঁর পরিবারকে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল রোববার আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ। আগামীকাল মঙ্গলবার রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে দেন এক অটোরিকশাচালক (২৭)। স্থানীয় বাসিন্দারা ৩ এপ্রিল রাতে সালিস বৈঠক বসান। স্থানীয় বাসিন্দা বায়েজিদ হোসেনের সভাপতিত্বে সালিসে ওই নারী পরকীয়ায় জড়িয়ে অপরাধ করেছেন মর্মে শাস্তি হিসাবে ৮২টি বেত্রাঘাত ও ৮০টি পাথর নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী স্থানীয় আকবর আলী (৬৮) ওই নারীকে একে একে ৮২টি বেত্রাঘাত করেন। ভুক্তভোগী নারীর স্বামী ওমানপ্রবাসী।

সালিস থেকে ওই নারীকে এক মাস ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়। ঘর থেকে বের হলে শাস্তি আরও ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী নারী ভয়ে ঘরে থেকে চিকিৎসা নেন। এ বিষয়ে ৭ এপ্রিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

স্ত্রীকে নির্যাতনের খবর পেয়ে ওমানপ্রবাসী স্বামী গত বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে আসেন। ৭ এপ্রিল ওই নারী বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় মামলা করেন। মামলায় ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ওই দিনই স্থানীয় মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম (৩০), স্থানীয় বাসিন্দা বায়েজিদ হোসেন (৭০), আকবর আলী (৬৯) ও আতিক উল্লাহকে (৫০) গ্রেপ্তার করে।

ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মামলা করার পর থেকে নানা চাপ আসছে মামলা প্রত্যাহারের জন্য। এ কারণে তাঁর স্ত্রী এখন গ্রামে নেই।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

চুনারুঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাদী ওই নারীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁকে মুঠোফোনে পাচ্ছি না। কী কারণে তিনি বাড়িছাড়া, আমরা তা তদন্ত করে দেখব।’

এদিকে ওই ঘটনার পর থেকে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া অটোরিকশাচালক গা ঢাকা দিয়েছেন। পরিদর্শক গোলাম মোস্তাক বলেন, ওই অটোরিকশাচালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ওই মামলায় যে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।