সিলেট শহরতলীর তারাপুর চা-বাগানের পাশেই গোয়াবাড়ি এলাকা। সেখানকার মোড়ে অটোরিকশায় বসে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন মিন্টু যাদব। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। সাতসকালে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। গত রোববার কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
আলাপে আলাপে মিন্টু যাদব জানান, স্ত্রী আর চার মেয়েকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার তাঁর। প্রতি মাসে তাঁর আয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। স্ত্রী গৌরি গোয়ালা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে আয় করেন আরও পাঁচ হাজার টাকা। তবে এই আয়ে সংসার চলতে চায় না।
সংসারের খরচের চিত্র তুলে ধরে মিন্টু যাদব বলেন, চার মেয়ের মধ্যে তিন মেয়ে পড়াশোনা করে। মেয়েদের স্কুল–কলেজের বেতন, কোচিং, যাতায়াতসহ পড়াশোনার পেছনে ব্যয় মাসে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। মায়ের শ্রাদ্ধের সময় নেওয়া ঋণের কিস্তি বাবদ প্রতি মাসে যায় ৭ হাজার ৪০০ টাকা। বাকি টাকায় ঘরভাড়া, খাবারসহ অন্যান্য খরচ কুলায় না।
সিলেট শহরতলীর টুকেরবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর এলাকার একটা টিনশেডের দুই কক্ষের বাসায় ভাড়া থাকেন মিন্টু যাদব। নিজের একটা অটোরিকশাই তাঁর একমাত্র সম্পদ। তিনি বলেন, বাসাভাড়া ২ হাজার ৫০০ টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চাল ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা, সয়াবিন তেল ৫৫০ টাকা এবং জ্বালানির জন্য লাকড়িবাবদ ১ হাজার টাকা তাঁর প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে। মাছ, মাংস, সবজিসহ সবকিছুরই তো দাম বেশি।
মিন্টু যাদব বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম দিন দিন বাড়তাছে। সংসারের চাপও বাড়তাছে। কুনুভাবে আর পারতাছি না। ধারকর্জ কইরাও চলতাম পারতাছি না।’ প্রতি মাসে সংসারের খরচ মেটাতে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা ধার করতে হয় বলে তিনি জানান। বলেন, ‘ধারদেনার শোধ দিতে দিতেই জীবন শেষ। এক টাকাও জমাইবার কুনু সুযোগ নাই। জমানো টাকা নাই, মাইয়ার বিয়াও দিতাম পারতাছি না।’