ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোট না দিয়েই ফিরে গেলেন নিখোঁজ প্রার্থীর স্ত্রী, বললেন ‘অসুস্থ নির্বাচন’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন নিখোঁজ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন। আজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র ভোটকেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের নিখোঁজ স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোটরগাড়ি প্রতীক) আবু আসিফ আহমেদের স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন ভোট দিতে এসে পরিবেশ দেখে ভোট না দিয়েই ফিরে গেছেন। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র ভোটকেন্দ্রে তিনি ভোট দিতে আসেন। এ সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্রের ২ নম্বর বুথে নিজের ভোট দিতে যান। কিন্তু ভোট না দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান তিনি।

এ সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরলে মেহেরুননিছা বলেন, ‘এটি একটি অসুস্থ নির্বাচন। কিছুক্ষণ আগে এসে দেখলাম, একজন ভোটারের আঙুলের ছাপ নিয়ে অন্যজন ভোট দিচ্ছেন। দিনভর সব কেন্দ্রেই এমন হচ্ছে। কর্মীদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছে। আগেও এজেন্টদের ভয় দেখানো হয়েছে। তাঁদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না, সেহেতু রেজাল্টটা কী আসবে, আপনারা বুঝতে পারছেন। আমাদের কর্মীরা পলাতক। এ অবস্থায় আমি আর কী বলতে পারি? প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিখোঁজ। ভোটের এই পরিবেশ দেখে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব কেন্দ্রেই একজনের ভোট আরেকজন দিচ্ছেন। এটা কি নির্বাচন? ভোটের এই পরিবেশ দেখে আমি ভোট দিইনি।’

বেলা একটার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র ভোটকেন্দ্রে মেহেরুননিছা মেহেরীন ভোট দিতে আসেন। কিন্তু ভোট না দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান তিনি।

নির্বাচন বর্জন করছেন কি না, প্রশ্নে মেহেরুননিছা বলেন, ‘আমি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে পরে বিষয়টি জানাব।’

মেহেরুননিছা মেহেরীন আরও বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের বিপক্ষে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমরা বিপুল ভোটে জয়ী হতাম। আমি নিজে এজেন্ট দিইনি, কর্মীরা দিয়েছিলেন। যে দুই-চারটিতে এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা কেন্দ্রে ঢোকার সাহস পাচ্ছেন না। যেকোনো মুহূর্তে তাঁরা গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে ভয় দেখানো হচ্ছে। ভয়ে তাঁরা পলাতক রয়েছেন।’

জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলার শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সৈয়দ রিয়াদউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কলার ছড়ি (আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া) প্রতীকের এজেন্টরা ভোটারদের সঙ্গে গোপন কক্ষে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। নিষেধ করলেও তাঁরা শোনেননি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপনির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাস এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি জানান, কেন্দ্রে ভোটারসংখ্যা ২ হাজার ৪২৮। বেলা দেড়টা পর্যন্ত ৩৩৩ ভোট পড়েছে।

তবে সকাল থেকে আশুগঞ্জ উপজেলার সাতটি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত  হিসাবে দেখা যায়, আশুগঞ্জের শালুকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৫ নম্বর বুথে, খোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ৫ নম্বর বুথে এবং সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের একটি বুথে কোনো ভোট পড়েনি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রই ভোটারশূন্য ছিল।

আশুগঞ্জের ইউএনও ও উপনির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হচ্ছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ সঠিক না।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি গত শুক্রবার থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন স্বামীর সন্ধান চেয়ে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের কাছে লিখিত আবেদন করেন।