শিক্ষক–সংকটে নাকাল

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সরকারি কলেজের প্রশাসনিক ভবন। সম্প্রতি তোলা ছবি
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে ১ হাজার ৮৪৩ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র একজন। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ৯৬০ শিক্ষার্থীর সমাজবিজ্ঞান পাঠদানের দায়িত্বেও আছেন এক শিক্ষক।

আইসিটির শিক্ষক প্রভাষক ফেরদৌস কবীর একা পাঠদান করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় উল্লেখ করে বলেন, ‘শিক্ষকের অভাবে ক্লাস চালাতে খুবই কষ্ট হয়। পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনিরুল ইসলামের সহযোগিতায় পাঠদান চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মেহেদী হাসানও শোনালেন কষ্টের কথা। তিনি বলেন, ‘একজনের পক্ষে এত শিক্ষার্থী সামলানো আসলেই কঠিন। রুটিন সমন্বয় করে পাঠদান করতে হচ্ছে।’

আইসিটি ও সমাজবিজ্ঞানের মতো উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে বাংলা বিষয়ে ৩ হাজার ১৪৬ শিক্ষার্থীর জন্য ৩ জন, ইংরেজিতে ২ হাজার ৭৪৬ শিক্ষার্থীর জন্য ২ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ২ হাজার ৫১৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৩ জন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ১ হাজার ৪৩৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৩ জন এবং অর্থনীতির ১ হাজার ৩০৭ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ২ জন শিক্ষক আছেন। কলেজে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, রসায়ন, হিসাববিজ্ঞান ও অর্থনীতি—এই সাত বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু আছে। শিক্ষার্থী আছে ১৯ হাজার ৫৭৪ জন।

এখানে শিক্ষকের ৪৫টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৩৬ জন। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুপাতে এ কলেজে শিক্ষকের ১১২টি পদ থাকা প্রয়োজন। শিক্ষক–সংকট থাকায় আইসিটি, সমাজবিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজির পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

শিক্ষক–সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম। তিনি এ সমস্যা সমাধানে শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘শিক্ষক–সংকট দূর করতে ৬৭টি পদ সৃজনে ৫ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবে অধ্যাপকের ৭টি, সহযোগী অধ্যাপকের ২৯টি, সহকারী অধ্যাপকের ১৭ ও প্রভাষকের ১৪টি পদ সৃজনের কথা বলা হয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকের সংখ্যা ৪৫ থেকে ১১২–তে উন্নীত হবে। সে ক্ষেত্রে অধ্যাপক হবেন ৭ জন, সহযোগী অধ্যাপক ২৯ জন, সহকারী অধ্যাপক ৩৩ ও প্রভাষক হবেন ৪৩ জন।

দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মারজিয়া মেহজাবীন বলে, ‘শিক্ষকের অভাবে একাদশ শ্রেণিতে বছরের প্রথম ১০ মাস আইসিটির ক্লাস হয়নি। কলেজে কম্পিউটার ল্যাব বা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই। গ্রন্থাগার থাকলেও তা কখনো খোলা হয় না। আগ্রহ থাকলেও বই পড়তে পারি না।’ একই শ্রেণির সুমাইয়া তাসনিম জানায়, শিক্ষক–সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় সিলেবাস শেষ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, দর্শনায় কেরু চিনিকল আখচাষি কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ১৯৬৯ সালের ৩০ জুন দর্শনা কলেজের যাত্রা শুরু। ১৯৮৩ সালের ১ মে এটি জাতীয়করণ হয়। ৩ দশমিক ৫৩ একর জমির ওপর এর ক্যাম্পাস। প্রশাসনিক, একাডেমিক, বিজ্ঞান ভবনসহ মোট ছয়টি ভবন থাকলেও ছাত্রীদের কমনরুম, প্রশাসনিক ভবনসহ পুরোনো তিনটি ভবনের সংস্কার জরুরি। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ছাত্রাবাস বা ছাত্রীনিবাস নেই। আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় দূরের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এ বিষয়ে কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চুয়াডাঙ্গা শহরের মল্লিকপাড়ার রিয়াদ রহমান বলেন, ‘অনলাইনে ভর্তির কার্যক্রম চালুর পর চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসেন। কলেজে আবাসন–সুবিধা না থাকায় তাঁদের বাড়তি খরচে মেসে অথবা বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়।’

কলেজ সূত্রে আরও জানা গেছে, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের বাইরে ১৬ জন সহকারী অধ্যাপক ও ২৯ জন প্রভাষক নিয়ে কলেজটিতে শিক্ষকের অনুমোদিত পদসংখ্যা ৪৫। সেখানে ১০ জন সহকারী অধ্যাপক ও ২৬ জন প্রভাষক কর্মরত। অর্থনীতি, পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও রসায়ন বিষয়ে দুজন করে এবং সমাজবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, গণিত ও আইসিটি বিষয়ে একজন করে প্রভাষক কর্মরত। গণিত বিভাগে সহকারী অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বাকি সাত বিভাগে সহকারী অধ্যাপকের পদ থাকলেও সেগুলো শূন্য রয়েছে।