ফরিদপুরে ধারের ৫০ টাকা নিয়ে বিরোধে মাদ্রাসাছাত্র খুন, কিশোর গ্রেপ্তার

আমির হামজাছবি: পরিবারের কাছ থেকে সংগৃহীত

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ধারের ৫০ টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে মাদ্রাসাছাত্র আমির হামজা ওরফে হানজালাকে (১৩) হত্যা করেছে একই মাদ্রাসার আরেক ছাত্র (১৬)। ওই কিশোরের ব্যবহৃত একটি কাঁথার সূত্র ধরে এ হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এসব তথ্য জানান ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মো. আজম খান।

নিহত আমির হামজা আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা গ্রামের সায়েমউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। সে গোপালপুর ইউনিয়নের চান্দড়া নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানার জামাতখানা বিভাগে পড়ত। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার কিশোরও ওই মাদ্রাসার ছাত্র।

সহকারী পুলিশ সুপার আজম খান বলেন, গ্রেপ্তার ওই কিশোর প্রায়ই আমির হামজার কাছ থেকে অল্প অল্প করে টাকা ধার নিত। সর্বশেষ ৫০ টাকা ধার নেওয়ার পর অনেক দিন ধরে তা ফেরত দেয়নি। এদিকে আমির হামজা বারবার টাকা ফেরত চাইতে থাকায় বিরক্ত হয় সে। গত রোববার বিকেলে সে হামজাকে বলে, সে বাড়ি থেকে টাকা এনে দেবে। এরপর সে একটি সাইকেলে করে হামজাকে সঙ্গে নিয়ে যায়।

এএসপি আজম খান বলেন, মাদ্রাসার পাশে একটি বাগান রয়েছে। সেই বাগান থেকে গ্রেপ্তার কিশোরের বাড়ি প্রায় ৫০০ গজ দূরে। ওই বাগানে টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই কিশোর হামজার গলা টিপে ধরে। এতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় হামজা। ঘটনার পর সন্ধ্যা হয়ে গেলে ওই কিশোর লাশ বাগানে ফেলে রেখে মাদ্রাসায় ফিরে আসে। সন্ধ্যার হাজিরা দিয়ে মাদ্রাসা থেকে একটি কাঁথা নিয়ে আবার বাগানে যায়। এরপর নিজের বাড়ি থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা এনে হামজার লাশ বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে পাঁচটি ইট ভরে দেয়, যাতে সেটি পানিতে না ভাসে। পরে বস্তাটি বাগানের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পুকুর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে এলাকাবাসী বস্তাটি দেখতে পায়। পরে পুলিশ গিয়ে বস্তাবন্দী অবস্থায় অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।

আরও পড়ুন

এএসপি আজম খান আরও বলেন, এটি একটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড ছিল। এ হত্যা রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য চারটি আলাদা টিম গঠন করা হয়। তদন্তে জানা যায়, আমির হামজা বিকেলে কারও সঙ্গে সাইকেলে উঠেছিল। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা কাঁথা ও মাদ্রাসার ওই কিশোরের ব্যবহৃত কাঁথা একই হলে হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তবে এ হত্যার পেছনে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জালাল আলম বলেন, এ ঘটনায় হামজার বাবা সায়েমউদ্দিন বিশ্বাস বাদী হয়ে গতকাল আলফাডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে সে আলফাডাঙ্গা থানা হেফাজতে আছে। আজ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।