পাথরঘাটায় প্রথমবারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন নারী প্রার্থী

নূর আফরোজা

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো একজন নারী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর নাম নূর আফরোজা। তাঁর সঙ্গে মাঠে আছেন আরও ছয়জন প্রার্থী। ভোটারদের আশা, নূর আফরোজা প্রার্থী হওয়ার মাধ্যমে উপকূলীয় এ এলাকায় পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এরপর থেকে প্রতি নির্বাচনেই নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তাঁরা।

২৯ মে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নূর আফরোজা ওরফে হেপী কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন। বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ারের স্ত্রী তিনি।

পরিবারের লোকজন বলেন, নূর আফরোজা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিকাটা ইউনিয়নের ভেচকী গ্রামে ১৯৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা নূরজাহান বেগম ও বাবা মো. বজলুর রহমান। তিনি মঠবাড়িয়ার হাতেম আলী খান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই থেকে টানা তিন মেয়াদে ১৮ বছর নূর আফরোজা ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। স্বামী গোলাম সরোয়ারের হাত ধরে তিনি রাজনীতির মাঠে আসেন।

নূর আফরোজা বলেন, ‘কালমেঘাসহ গোটা পাথরঘাটা উপজেলাবাসীর মধ্যে আমার স্বামী গোলাম সরোয়ার ও শ্বশুর আহের উদ্দিন তালুকদারের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে আমি কালমেঘা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। সেই থেকে টানা ১৮ বছর চেয়ারম্যান ছিলাম। চেয়ারম্যান থাকাকালে ও পরেও কালমেঘার প্রতে৵কটি মানুষের সুখ–দুঃখের পাশে ছিলাম। কাজের স্বীকৃতি আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পাথরঘাটা উপজেলার মৎস্যজীবী মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের পাশে থেকে সাহস নিয়ে কাজ করেছি।’

চরদুয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য জাহানারা জানু বলেন, উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নারী চেয়ারম্যান থাকলে ইউনিয়ন পরিষদের নারী ইউপি সদস্য ও গ্রামের তৃণমূল নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারবেন। এতে নারীদের মধ্যে জনবান্ধব নেতৃত্ব তৈরি হবে।

আওয়ামী লীগের কর্মীরা বলেন, নূর আফরোজা ১৯৯৭ সালে কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই থেকে টানা তিন মেয়াদে তিনি ১৮ বছর ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তী সময়ে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন। তবে ২০১৬ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আকন মো. সহিদের সঙ্গে তিনি পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে নূর আফরোজা বিএনপি দলীয় প্রার্থী ছিলেন। হারের পর দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে নিষ্ক্রিয় থাকেন। তবে পরে তিনি ও তাঁর স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার গণভবনে আমন্ত্রণ পান ও আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুনিরা ইয়াসমিন বলেন, নূর আফরোজা একজন অভিজ্ঞ জনপ্রতিনিধি। তা ছাড়া দলমত–নির্বিশেষে এবং নারী-পুরুষ সব ভোটারের মধ্যেই তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাই যোগ্য নারী নেতৃত্ব বিকশিত হলে তৃণমূলের নারীরাও উপজেলা পরিষদে এসে আস্থা পাবেন।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যরা হলেন পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা গোলাম কবির (কাপ-পিরিচ), উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম (আনারস), কালমেঘা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকন মো. সহিদ (চিংড়ি মাছ), পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান (ঘোড়া), বরগুনা জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য ও পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকে মো. এনামুল হোসাইন (দোয়াত কলম) ও হেমায়েত হোসেন (হেলিকপ্টার)।