বিক্ষোভ সমাবেশে প্রকাশ্য রূপ নিল সিলেট মহানগর বিএনপির বিভক্তি

সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন অংশটি নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে
ছবি : প্রথম আলো

সিলেট মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ভোলায় গুলিতে বিএনপির নেতা আবদুর রহিম নিহতের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দলটির বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল। এ সমাবেশে কে সঞ্চালনা করবেন, এ নিয়ে বিবাদের জের ধরে দুটি পক্ষ পৃথকভাবে কর্মসূচি করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ দুটি পক্ষের মধ্যে ভেতরে-ভেতরে দ্বন্দ্ব চলছিল।

মহানগর বিএনপির একটা অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন মহানগরের আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী ওরফে পংকি। অপর অংশের নেতৃত্বে আছেন মহানগরের সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী। আবদুল কাইয়ুম বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলয়ের একজন নেতা। অন্যদিকে মিফতাহ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

দলীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ছাড়াও ১৩ জন যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২০ জন সদস্য আছেন। কমিটি গঠনের কিছুদিন পর থেকেই বেশির ভাগ যুগ্ম আহ্বায়ক মহানগরের সদস্যসচিবকে ‘বয়সে জুনিয়র, অকর্মীবান্ধব ও একনায়কতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে বিরোধিতা করে আসছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষে ক্রমে বিভক্তি বাড়ে।

এরই জের ধরে গত ১৮ জুলাই মহানগর বিএনপির বর্ধিত সভায় মিফতাহ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দলে ভাঙনের অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক বক্তব্য দেন। এ অবস্থায় মিফতাহ ওই সভায় বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে বাধা দেন তাঁর বিপক্ষ বলয়ের নেতারা। এ নিয়ে সভায় হট্টগোল হয়। পরে অবশ্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সর্বশেষ ৩০ জুলাই সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের উপস্থিতিতে মহানগর বিএনপির এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী অনুপস্থিত ছিলেন। তবে মিফতাহ দাবি করেছেন, অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি সমাবেশে যাননি।

সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালীর নেতৃত্বাধীন অংশটি রেজিস্টারি মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে
ছবি : প্রথম আলো

এদিকে আজ বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে দুপুরের পর থেকেই নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হন মহানগরের সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী ও তাঁর অনুসারীরা। পরে বেলা তিনটার দিকে তাঁরা হাজারো নেতা-কর্মীসহ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরের রেজিস্টারি মাঠের সমাবেশস্থলে মিলিত হয়। এর আগে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালীসহ বিএনপির অপর অংশের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হন।

বিক্ষোভ সমাবেশটি শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা সাড়ে তিনটায়। তার আগে সমাবেশে কে সঞ্চালনা করবেন, এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। সদস্যসচিবের অনুসারীরা জানান, সাংগঠনিক বিধি অনুযায়ী দলের সদস্যসচিবের সমাবেশ সঞ্চালনা করার কথা থাকলেও আহ্বায়ক চাচ্ছিলেন সদস্যসচিবের সঙ্গে আরও একজন নেতা যৌথভাবে সঞ্চালনা করুক। সেটা সাংগঠনিক বিধিপরিপন্থী হওয়ায় সদস্যসচিবের অনুসারীরা এতে বাধা দেন। অন্যদিকে আহ্বায়কের নেতৃত্বাধীন অংশটি যৌথভাবে সমাবেশ সঞ্চালনার বিষয়ে মত দেয়।

কর্মসূচি পালন শেষে উভয় পক্ষ পৃথকভাবে নিজেদের কর্মসূচি পালনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে আলাদাভাবে পাঠিয়েছে।

আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী যৌথভাবে দুজনের সমাবেশ পরিচালনার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী বলয়ের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থল ত্যাগ করে নগরে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেন। এতে সমাবেশস্থলে থাকা বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থক যোগ দেন। মিছিলে সদস্যসচিব ছাড়াও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান, সুদীপ রঞ্জন সেন, রোকশানা বেগম, সালেহ আহমদ প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

তবে রেজিস্টারি মাঠে নির্ধারিত সমাবেশস্থলে মহানগরের আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালীর সভাপতিত্বে তাঁর নেতৃত্বাধীন অংশটি সমাবেশ করেছে। এতে সঞ্চালনা করেন মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। সভায় মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ূন কবির, জিয়াউল গণি, নজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সমাবেশে কর্মী-সমর্থক কম থাকলেও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচি পালন শেষে উভয় পক্ষ পৃথকভাবে নিজেদের কর্মসূচি পালনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে আলাদাভাবে পাঠিয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, আজকের কর্মসূচিতে ১৩ জন যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে মোট আটজন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে উভয় বলয়ে পৃথকভাবে চারজন করে যুগ্ম আহ্বায়ক অংশ নেন।

এ ব্যাপারে সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিষয়টি তেমন কিছু নয়। এটা শেষ হয়ে যাবে।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী বলেন, রেজিস্টারি মাঠে মহানগর বিএনপির কর্মসূচি ছিল। এর বাইরে কারা মিছিল করেছে, সেটা জানা নেই। সভা পরিচালনায় সদস্যসচিবের সঙ্গে আরেকজনের নাম প্রস্তাব আসায় সদস্যসচিব চলে যান। বিভক্তির আর কোনো কারণ নেই।