গাজীপুর সিটির নতুন মেয়রের কাছে অনেক প্রত্যাশা নগরবাসীর

আজ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন জায়েদা খাতুন। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে সিটি করপোরেশন সরগরম।

জায়েদা খাতুন

নির্বাচিত হওয়ার সাড়ে তিন মাস পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন জায়েদা খাতুন। তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এখন সরগরম।

আজ সোমবার সকালে অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সিটি করপোরেশন। নগর ভবনের দক্ষিণে রথখোলা এলাকায় বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে নগরীর প্রথম নারী মেয়রকে। নতুন মেয়রের কাছে অনেক প্রত্যাশা নগরবাসীর।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব আবদুল হান্নান বলেন, নির্বাচিত নতুন মেয়র জায়েদা খাতুনের দায়িত্বভার গ্রহণ উপলক্ষে আজ সকালে সব কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

মেয়র হিসেবে জায়েদার অভিষেকের দিন রাঙাতে আয়োজনের কমতি রাখছেন না ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও। গতকাল রোববার সকালে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শত শত নেতা–কর্মীর সমাগম। থেকে থেকে বিভিন্ন স্লোগান ধরছেন তাঁরা। বাড়ির সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে শতাধিক পিকআপ দাঁড় করানো। প্রতিটিতে দুই পাশে ব্যানার সাঁটানো। প্রতিটি পিকআপে লাগানো হয়েছে সাউন্ড বক্স।

আমাদের প্রত্যাশা নতুন মেয়র প্রথমেই জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মানসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবেন।
শাহজাহান মিয়া, আইনজীবী, গাজীপুর জজ কোর্ট

গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয় ২০১৩ সালে। ওই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রয়াত নেতা এম এ মান্নান। মেয়র হিসেবে খুব বেশি দিন দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয়। করা হয় গ্রেপ্তার। প্রেপ্তারের পর প্রায় ১৮ মাস থাকতে হয় কারাগারে। একপর্যায়ে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর ২৭ মাস ১৩ দিন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান।

দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র হন জাহাঙ্গীর আলম। জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অডিও ফাঁসের জের ধরে দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পাশাপাশি মেয়র পদ হারান তিনি। আবারও ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান আসাদুর রহমান। এ মেয়াদে তিনি ২১ মাস মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। এসব অভিযোগ উচ্চ আদালতের নির্দেশে অনুসন্ধান করছে দুদক।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম প্রত্যাশা বিগত প্রতি মেয়াদে কোনো মেয়রই পাঁচ বছর পূর্ণ করতে পারেননি, এবার অন্তত সেটি হবে না। সেই সঙ্গে নাগরিক হিসেবে প্রত্যাশা করছি, ইতিপূর্বে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন লক্ষ করা গেছে। আগামী পাঁচ বছর নাগরিক সুবিধার মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে বাস্তবিক অর্থে কাজ হবে বলে প্রত্যাশা করছি। নাগরিকদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে বলে বিশ্বাস রাখি।’

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ছিল ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আসাদুর রহমানের শেষ কর্মদিবস। সে উপলক্ষে সকালে সিটি করপোরেশনের সভাকক্ষে মাসিক সভার আয়োজন করা হয়। এতে ২০১৮ সালে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু ১৫-১৬ জন কাউন্সিলর ওই সভায় যোগ দেন। পড়েন কোরাম–সংকটে।

ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে নিজেকে সফল দাবি করলেন মেয়র আসাদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আপনারা বুঝতে পারবেন, আমি কী নিয়ে বসেছি আর কী দিয়ে গেলাম। আমি ১৮ কোটি টাকা নিয়ে বসেছিলাম, আজকে ১২৭ কোটি টাকা আমার ফান্ডে। ৯৯ কোটি টাকা মাইনাস ছিল। আমি কী করেছি, সেগুলো নিয়ে একটি বই বের করেছি; সবাইকে দেওয়া হবে। মেয়রের দায়িত্বে বসার ক্ষেত্রে আমার কোনো কারসাজি ছিল না। সরকার ভালো মনে করেছে, আমাকে দিয়েছে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১০ বছর হয়ে গেলেও এখনও অনেক এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যার কারণে মানুষের মধ্যে ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসে এলাকার উন্নয়ন। নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভুরুলিয়া, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাজুলিয়া এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিয়াব ও ভাওরাইদ, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের জোলারপাড়, বিপ্রবর্তা, কাউলতিয়াসহ অনেক এলাকা এখনও মূলত গ্রাম। এসব এলাকায় নাগরিক সুবিধা না পেলেও দিতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই স্থানীয় লোকজনের।

গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী ও ছায়াবিথী এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘গাজীপুর শহরের মূল সমস্যা ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিলে যায় পুরো শহর। বৃষ্টি থেমে গেলেও জমা পানি সরে যেতে অনেক সময় লাগে। নগরীর আরও অনেক জনবহুল এলাকায় জলাবদ্ধতা বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা নতুন মেয়র প্রথমেই জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মানসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবেন।’

মেয়র হিসেবে অভিষেক প্রসঙ্গে জায়েদা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর হয়ে ছেলে জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মা সবার পরামর্শ নিয়ে নগরের উন্নয়ন করে যাবেন। নগরের প্রধান সমস্যাগুলোর সমাধানে আগে কাজ করা হবে।