সাতক্ষীরায় ট্রাক উল্টে নিহত ২ ধান কাটা শ্রমিকের বাড়িতে মাতম

স্বামীকে হারিয়ে কান্না থামছেই না মিজানুর রহমানের স্ত্রী স্বপ্না পারভীনের। মঙ্গলবার দুপুরে শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ট্রাক উল্টে নিহত ধান কাটা শ্রমিক মিজানুর রহমান ও আবুল হাসানের বাড়িতে চলছে মাতম। একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা দুজনের স্ত্রী–সন্তানেরা।

শরীয়তপুরের লক্ষ্মীপুরা এলাকা থেকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ২৪৫ বস্তা ধান নিয়ে সাতক্ষীরায় ফিরছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। কয়েক দফা বিরতি দিয়ে আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন তাঁরা যশোরের চুকনগরের পৌঁছান, তখন ট্রাকটির চালক সাগর তাঁর সহকারী ইমনকে গাড়ি চালাতে দেন।

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা এলাকার কুমিরা মহিলা কলেজের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ হারান ইমন। তখন ট্রাকটি রাস্তার বাঁ দিকে উল্টে যায়। এতে ট্রাকে থাকা ঘুমন্ত শ্রমিকেরা ধানের বস্তার নিচে চাপা পড়েন। এতে ওই দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন

মিজানুর রহমান (৩৫) শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী গ্রামের আবু হেনা কামালের ছেলে। তাঁর এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। আবুল হোসেন (৫০) জয়নগর গ্রামের ওমর আলী গাজীর ছেলে। তাঁর চার সন্তান রয়েছে।

মিজানুর রহমানের স্ত্রী স্বপ্না পারভীন বিউটি বিলাপ করতে করতে বলেন, তাঁরা অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকছিলেন। সম্প্রতি মিজানুরের চাচা তাঁকে একখণ্ড জমি দেন। ওই জমিতে একটি ঘর তোলার জন্য টাকা দরকার। এ জন্য মাদারীপুর ধান কাটতে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী।

এ সময় স্বপ্নাকে শান্ত্বনা দিতে গিয়ে স্বজনদের অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

একটানা বিলাপ করছিলেন একই গ্রামের নিহত আবুল হাসানের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে আবুল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর স্ত্রী সুফিয়া ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া জমজ দুই ছেলে বিলাপ করছে। উঠানে শূন্যদৃষ্টিতে নির্বাক তাকিয়ে আছে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বড় ছেলে আল মামুন।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, গত ৩০ এপ্রিল মিজানুর রহমান, আবুল হোসেনসহ স্থানীয় ২৪ জন শ্রমিক ধান কাটার জন্য মাদারীপুরে যান। কাজের বিনিময়ে পাওয়া ধান নিয়ে সোমবার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আবুল হোসেনের এক স্বজন বলেন, আবুল হোসেন ১৮ দিন আগে বরিশাল এলাকায় ইটভাটার কাজ শেষ করে বাড়িতে আসেন। তিন দিন বাড়িতে থাকার পর মাদারীপুরে ধান কাটতে যান। তাঁকে (আবুল হোসেন) হারিয়ে তাঁর ওপর নির্ভরশীল পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে।