ডোমারের বুদুর ঘাট পারাপারে ভরসা কলার ভেলা 

বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তি বাড়ে। নদীর স্রোতে সাঁকো ভেসে যায়। কলার ভেলা হয় নদী পারাপারের একমাত্র অবলম্বন।

সেতু বা সাঁকো নেই। কলাগাছের ভেলায় পার হতে হয় লোকজনকে। গত শুক্রবার নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সব্দিগঞ্জ গ্রামে বুদুর ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সব্দিগঞ্জ গ্রাম ও পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সর্দারপাড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে বুড়ি তিস্তা নদী। ওই দুই গ্রামের লোকজন বুদুর ঘাট দিয়ে নদী পারাপার হন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। 

এদিকে শুকনা মৌসুমে সেখানে সাঁকো বানিয়ে লোকজন চলাচল করেন। তবে বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তি বাড়ে। নদীর স্রোতে সাঁকো ভেসে যায়। তখন কলার ভেলা হয় তাঁদের নদী পারাপারের একমাত্র অবলম্বন।

গত শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, বুদুর ঘাটে কলার ভেলায় লোকজন পারাপার হচ্ছেন। বোদা উপজেলার সর্দার পাড়ার বাসিন্দা আবদুর রশীদ (৩০) বলেন, ‘নদীর দুই পারের লোকজনের সহায়তায় প্রতিবছর আমরা এখানে বাঁশের সাঁকো তৈরি করি; কিন্তু বন্যার সময় তা ভেসে যায়। তখন আমাদের যাতায়াতে খুব সমস্যা হয়। বাধ্য হয়ে কলার ভেলায় করে নদী পার হতে হয়। অনেক সময় কলার ভেলা থেকে পড়ে বাচ্চাদের বই-খাতাও ভিজে যায়।’ 

বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের তেলীপাড়া, সর্দারপাড়া, বকদুলঝুলা ও চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বুদুর ঘাট পার হয়ে ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের গোসাইগঞ্জ, সব্দিগঞ্জ, মুক্তিরহাট, কারেঙ্গতলী, চিলাহাটিসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। সেতু না থাকায় এসব স্থানে চলাচল করতে অন্তত ১০ কিলোমিটার পথ অতিরিক্ত ঘুরতে হয়। সেতু নির্মাণ করা হলে নদীর দুই পাড়ের অন্তত ১০ হাজার মানুষ সুফল পাবেন।

কলার ভেলার মাঝির কাজ করেন শহিদুল ইসলাম (৬৫)। এই কাজে তাঁকে সহায়তা করেন তাঁর ভাতিজা। শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কত মানুষ নদী পার হয় তার হিসাব নেই। জনপ্রতি পাঁচ টাকা নেন। সঙ্গে সাইকেল থাকলে ১০ টাকা। এলাকার লোকজন গরিব। অনেকে টাকা না দিয়ে পারাপার হন। তিনি কোনো জোরাজুরি করেন না। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা চান না। তারা যে টাকা দেয়, তা–ই নেন। 

এলাকার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও বুদুর ঘাটে সেতু নির্মিত হয়নি। পূর্ব সর্দারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম (৪০) বলেন, ‘এই নদীর জইন্যে হামরা প্রতিবন্ধী হয়া গেছি। হামার ছাওয়াপাওয়া স্কুল যাবার পারে না। নদীটা অনেক কয়বার মাপ নিয়া গেইছে; কিন্তু পুল হয় নাই।’

ভোগডাবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক বছর ধরে নদীর দুই পারের মানুষ একটি সেতুর জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য, এলজিইডি, ত্রাণসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও দপ্তরে ধরনা দিয়েছি; কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কী কারণে সেতু হচ্ছে না, তা আমি বুঝতে পারছি না।’

ডোমার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবদুল মাবুদ বলেন, ত্রাণ অধিদপ্তরের অর্থায়নে ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। বুদুর ঘাটে প্রায় ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু প্রয়োজন। তাঁদের দপ্তর থেকে ১৫ মিটারের বেশি সেতু নির্মাণ করতে পারেন না। 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমরা দেখব, সেটি যদি আমাদের আইডিভুক্ত কোনো সড়ক হয়, তাহলে সেখানে সেতু নির্মাণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’