নরসিংদীর রায়পুরায় শিশুসন্তানের গলায় ছুরি ধরে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি শরিফ হাসানকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আজ সোমবার ভোর পৌনে ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার মোগড়া ইউনিয়নের নয়াদিল গ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী এক বছর ধরে প্রবাসে আছেন। গত রোববার দিবাগত রাতে এ ঘটনার পর পাঁচ দিন ধরে ওই গৃহবধূর বাবা লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানা-পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও মামলা নিচ্ছিল না পুলিশ। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ স্থানীয় সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপরই লিখিত অভিযোগটি পরদিন শনিবার সকালে মামলা হিসেবে নেয় রায়পুরা থানা।
মামলায় দুজনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন রায়পুরার মির্জাপুর ইউনিয়নের মৃত রাশেদ মিয়ার ছেলে শরিফ হাসান (২৫) এবং মৃত জামাল মিয়ার ছেলে শাহ পরান (২২)। তাঁরা দুজন এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত।
গৃহবধূ ছয় ও আড়াই বছর বয়সী দুই ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত দুইটার দিকে শরিফ হাসান ও শাহ পরান তাঁর ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রায়পুরার মির্জাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার রাতে ওই গৃহবধূ তাঁর স্বামীর বাড়িতে ছয় ও আড়াই বছর বয়সী দুই ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত দুইটার দিকে শরিফ হাসান ও শাহ পরান তাঁর ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে ছয় বছর বয়সী ছেলের গলায় ছুরি ধরে ভয় দেখিয়ে ওই গৃহবধূর মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলেন তাঁরা। পরে ছেলেদের সামনেই ধর্ষণ করেন ওই দুজন। ধর্ষণে বাধা দিলে ওই গৃহবধূকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যাচেষ্টা এবং হাতে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করা হয়। ঘটনা কাউকে জানানো হলে তাঁকে ও ছেলেদের হত্যার হুমকি দিয়ে তাঁরা দুজন চলে যান।
র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলবদ্ধ এই ধর্ষণের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে র্যাব-১১ নরসিংদী আসামিদের ধরতে তৎপরতা শুরু করে। পরে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি শরিফ হাসান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়নের নয়াদিল (বাসুদেবপুর) গ্রামের মন্নাফ মিয়ার বাড়িতে আত্মগোপন করে আছেন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আসামির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আজ ভোরের দিকে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তাঁর কাছ থেকে দুটি মুঠোফোন ও দুটি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।
জানতে চাইলে র্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে (শরিফ) নরসিংদীর রায়পুরা থানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মামলার অপর আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।