ইলিয়াসের দিন ফিরিয়েছে ‘সুন্দরী বরই’

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বরই বাগানে পরিচর্যায় ব্যস্ত ইলিয়াস আহমেদ। সম্প্রতি উপজেলার নামদারপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

হালকা হলুদ রঙের বরইয়ের নাম ‘বল সুন্দরী’ আর লাল-হলুদের মিশ্রণে যে বরই আছে, নাম তার ‘ভারত সুন্দরী’। এই দুই সুন্দরী জাতের বরই চাষ করে লাভবান হয়েছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কৃষক ইলিয়াস আহমেদ।

গত রোববার পর্যন্ত তিনি ইলিয়াস তাঁর তিনটি বাগান থেকে ১৩ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৬-৭ লাখ টাকার বরই বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। বছরে গড়ে তাঁর খরচ হয় ৮-৯ লাখ টাকা। বরই চাষ করে ইতিমধ্যে ইলিয়াস আহমেদ এলাকায় কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

ইলিয়াস আহমেদ উপজেলার নামদারপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। বাগান ঘুরে ও ইলিয়াসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের ভেতর সাড়ে তিন একর জমিতে গড়ে তুলেছেন এ বাগান। সেখানে গাছ আছে প্রায় তিন হাজার। এবার ফলন বেশি হওয়ায় বিক্রিও ভালো হয়েছে।

খরচ বাদ দিয়ে এবার তাঁর বাগান থেকে বছরে আয় হবে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। আপেলের মতো রং হয় বলে অনেকেই ভারত সুন্দরীকে আপেল কুল বলে থাকেন। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। আর বল সুন্দরী গোলাকার ও খেতে বেশ মিষ্টি।

কীভাবে শুরু হলো এ যাত্রা? জিজ্ঞেস করলে ইলিয়াস বলেন, তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন। এরপর তিনি একটি স্থানীয় কিন্ডারগার্টেনে চাকরি নেন। ২০২০ সালে করোনার সময়ে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বেকার হয়ে যান। এরপর ইউটিউব দেখে বরই চাষ শুরু করেন। প্রথমে নিজের দুই একর জমিতে, এরপর আরও দেড় একর জমি ইজারা নেন।

সাড়ে তিন বছর পর প্রতিটি গাছে এবার প্রচুর ফলন হয়েছে। প্রতিদিন বাজারজাত করার জন্য বরই তুলছেন শ্রমিকেরা। এসব বরই যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।‌ তিনি ইতিমধ্যে তাঁর বাগান থেকে ১৩ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। আগামী এক সপ্তাহে আরও ছয়-সাত লাখ টাকার বরই বিক্রি করবেন।

কৃষি উদ্যোক্তা ইলিয়াস আহমেদ বলেন, প্রতিটি গাছে আকারভেদে প্রায় এক মণ করে ফল ধরেছে। যার পাইকারি বাজারমূল্য ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। স্থানীয় হাটবাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। তাঁর তিনটি বাগানে পরিচর্যার জন্য ছয়জন শ্রমিক কাজ করেন।

সখীপুর পৌর শহরের ফল বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, দুই সুন্দরী জাতের বরইগুলো দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় এখন অনেকেই সভা-সেমিনারে মিষ্টির পরিবর্তে বরই দিয়ে আপ্যায়ন করছেন। ফলে এ দুই জাতের বরইয়ের বর্তমান বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মণ বলেন, সখীপুরের মাটি ফল উৎপাদনে বেশ উপযোগী। কৃষিকাজে সম্ভাবনা দেখায় অনেক শিক্ষিত যুবক কৃষি উদ্যোক্তা হয়েছেন। তাঁরা নতুন নতুন ফল চাষে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন। ইলিয়াস আহমেদ পরিকল্পিতভাবে চাষ করায় তাঁর বাগানে এ বছর ব্যাপক ফলন হয়েছে। তাঁকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষিকাজে আসছে।