নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো, ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার প্রাণনাথ চরে মরাতিস্তা নদীর ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন কয়েক গ্রামের মানুষছবি: প্রথম আলো

নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। তার ওপর হাঁটার জন্য বিছানো রয়েছে বাঁশের চাটাই। সে চাটাইও বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। এর মধ্য দিয়েই লোকজন হেঁটে বা সাইকেল নিয়ে পার হচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন চার গ্রামের হাজারো মানুষ।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের প্রাণনাথ এলাকায় মরাতিস্তা নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষদের উদ্যোগে ২০১২ সালে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। দুই বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় বাঁশের সাঁকোটি বর্তমানে বেহাল।

স্থানীয় মানুষেরা বলেন, প্রাণনাথ এলাকায় একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য তাঁরা বছরের পর বছর দাবি জানিয়ে আসছেন। এর বদলে শুধু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, বাঁশের সাঁকোটির দৈর্ঘ্য ২৫০ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট। সেতুর পূর্ব দিকে চারটি গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামগুলো হলো নাজিরদহ, ঠিকানার বাজার, মিলন বাজার, পাগলার হাট। গ্রামের মানুষদের প্রতিদিন নানা কাজে ছুটে যেতে হয় কাউনিয়া বাজারে। এই বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে একমাত্র পথ চলাচলের। আর তা না হলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ একতা সেতুর ওপর দিয়ে ঘুরে যেতে হবে। সেতুটি নির্মাণে এলাকার মানুষদের কেউ কেউ গাছ দিয়েছেন। সেই গাছ দিয়ে সেতুর খুঁটি বানিয়ে তাঁর ওপর বাঁশের চাটাই এবং বাঁশ দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়।

গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, অধিকাংশ স্থানে বাঁশের চাটাই উঠে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছেন। আবার অনেককে সাইকেলে মালামাল নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতেও দেখা যায়।

সাইকেলে মরিচ বিক্রি করতে কাউনিয়া বাজারে যাচ্ছিলেন নাজিরদহ এলাকার বাসিন্দা আলেফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এইভাবে হামাকগুলাক কষ্ট করিয়া বাজারোত যাওয়া লাগে। পাকা পুল (সেতু) না হইলেও এই বাঁশের সাঁকোটা যে নড়বড়ে হইছে, তা-ও ঠিক করি দেয় না।’

মিলন বাজার এলাকার কৃষক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এলাকার জনগণের উদ্যোগে এই সাঁকো করা হয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে গত তিন বছর ধরে সংস্কার করা হয় না। এই জন্য সেতুটা নানা জায়গায় ভেঙে গেছে। উপজেলা অফিসে যোগাযোগ করে পাকা সেতুর জন্য কতবার দাবি জানানো হয়েছে, কিন্তু লাভ হয়নি।

শহীদবাগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান বলেন, তিনি তাঁর পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছেন।

কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া বলেন, প্রাণনাথ এলাকায় পাকা সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। অর্থাভাবে প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে না। তবে পাকা সেতু না হওয়া পর্যন্ত বাঁশের সাঁকোটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।