এক মাসে ১৯ ট্রান্সফরমার চুরি

চুরির ঘটনাগুলো ঘটছে ঘোড়াধাপ, ইটাইল ও রানাগাছা ইউনিয়নে। গ্রাহকেরা দুর্ভোগের পাশাপাশি চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

  • তামাজাতীয় মূল্যবান কয়েল থাকায় প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছে ট্রান্সফরমার চোর চক্র।

  • নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপনে ১২ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হবে।

জামালপুর সদর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) আওতাধীন এলাকা থেকে গত আগস্ট মাসেই ১৯টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া ট্রান্সফরমার মধ্যে ৮টি গভীর নলকূপের।

চুরির ঘটনাগুলো সদর উপজেলার ঘোড়াধাপ, ইটাইল ও রানাগাছা ইউনিয়নে ঘটেছে। এতে এই তিনটি ইউনিয়নের গ্রাহকেরা দুর্ভোগের পাশাপাশি চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

এদিকে প্রায় এক মাস পবিস কার্যালয়ে ঘুরে মালিকদের ওই ট্রান্সফরমার নিতে হয়েছে। তবে ট্রান্সফরমার নেওয়ার সময় তাঁদের ট্রান্সফরমারের অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে।

জামালপুর সদর উপজেলার পবিস নান্দিনা জোনাল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই কার্যালয়ের অধীনে ঘোড়াধাপ, ইটাইল, রানাগাছা, নরুন্দি, বাঁশচড়া, শরিফপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের আওতায় ১৪৩টি গ্রাম রয়েছে। গ্রাহকসংখ্যা ৬১ হাজার।

বিভিন্ন গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা চালু রাখতে বিভিন্ন স্থানের খুঁটিতে ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ কেভি (কিলোভোল্ট) ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়। এই ট্রান্সফরমারগুলোতে তামাজাতীয় মূল্যবান কয়েল থাকায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে ট্রান্সফরমার চোর চক্র। গত আগস্ট মাসেই চুরি হয়েছে ওই ১৯টি ট্রান্সফরমার।

সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের কানিল গ্রামের কৃষক মো. শহিদুল ইসলামের ৫ কেভির গভীর নলকূপের ১টি, কৃষক আল আমিনের ৫ কেভির ১টি ও মো. গোলাম উদ্দিনের ১০ কেভির গভীর নলকূপের ১টি, ঘোড়াধাপ ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মোহাম্মদ শাহজাহানের ১০ কেভির ২টি, মির্জাপুর গ্রামের মো. মাহবুল্লাহ মেননের ১৫ কেভির ৩টি, হরিপুর গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের ১০ কেভির গভীর নলকূপের ৩টি, দখলপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ১০ কেভির গভীর নলকূপের ১টি, ভারুয়াখালী গ্রামের মো. তুষার তালুকদারের ১০ কেভির ৩টি, ইটাইল ইউনিয়নের কাতলশা গ্রামের মো. ইউনুছ আলীর ৫ কেভির ১টি ও দমদমা গ্রামের মো. বোরহান উদ্দিনের ১ কেভির ৩টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।

পবিস সূত্রে জানা গেছে, ৫ কেভির ট্রান্সফরমারের দাম ৩৫ হাজার টাকা, ১০ কেভির দাম ৬৭ হাজার টাকা ও ১৫ কেভির দাম ৭২ হাজার টাকা এবং ২৫ কেভির মূল্য প্রায় ১ লাখ টাকা। ফলে ৮টি গ্রামের চুরি হওয়া ১৯টি ট্রান্সফরমারের দাম প্রায় ১২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। পবিসের নিয়ম অনুযায়ী, চুরি হওয়ার স্থানে নতুন করে ট্রান্সফরমার স্থাপনে গ্রাহকদের অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। ফলে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে গ্রাহকদের প্রায় ৬ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ও পবিসের ৬ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা লোকসান গুনতে হবে।

ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তাঁর রাইচ ও করাতকলের ১০ কেভির দুটি ট্রান্সফরমার ছিল। গত ২৭ আগস্টের এক রাতে তা চুরি হয়ে যায়। এরপর থেকে দুটি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল। ১৫ দিন ঘুরাঘুরির পর প্রায় ৮০ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়ে দুটি ট্রান্সফরমার লাগানো হয়েছে। এভাবে সবাই ভর্তুকি দিয়ে ট্রান্সফরমার নিয়েছেন। নরুন্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দিলেও তারা কিছুই করেনি।

কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, তিনটি ট্রান্সফরমার আওতায় তিনটি গভীর নলকূপ ছিল। আর এই তিনটি গভীর নলকূপের আওতায় আছে প্রায় ২০০ বিঘা জমি। এসব জমিতে পানি দেওয়া প্রায় এক মাস তা বন্ধ ছিল। এতে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছে। পরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফরমার নিয়েছেন।

সদর উপজেলার নরুন্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, দুটি ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম। বাকি ১৭টির বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই সেগুলো নিয়ে তদন্ত করা হবে।

পবিস নান্দিনা জোনাল কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হাবিবুর রহমান বলেন, চোর চক্রটি ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা শুধু তামাজাতীয় মূল্যবান কয়েল নিয়ে যায়। চুরি বন্ধে মাইকিং, প্রচারণা, গ্রামে আলোচনা সভা ও উঠান বৈঠক চলছে। চুরি যাওয়া ওই সব ট্রান্সফরমারের আওতায় থাকা গ্রাহকদের অর্ধেক মূল্যে নতুন ট্রান্সফরমার দেওয়া হয়েছে।