পার্বতীপুরে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের ১০ লাখ টাকা নিয়ে ‘উধাও’ সমবায় সমিতির পরিচালক

দিনাজপুর জেলার মানচিত্র

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় একটি সমবায় সমিতির পরিচালক স্থানীয় ২৫০ জন গ্রাহকের জমানো ১০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে ওই সমিতির পরিচালক ও তাঁর স্ত্রীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ ও সঞ্চয়ের টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হওয়া ব্যক্তির নাম আবদুর রহিম। তিনি সততা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত একটি সমিতির পরিচালক। পার্বতীপুর শহরের গুলশান নগর মহল্লার একটি বাড়িতে পাঁচ বছর ধরে ঋণ-সঞ্চয় দেওয়া-নেওয়ার কাজ করতেন।

দিনাজপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা শেখ মো. হারুন অর রশিদ আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ নিয়ে কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। তবুও বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সততা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে আবদুর রহিম গুলশান নগর মহল্লার মো. শাহীন হোসেনের বাড়ির নিচতলায় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পার্বতীপুর শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রায় ২৫০ জনকে সমিতির সদস্য বানান তিনি। এর মধ্যে ২০০ গ্রাহক ঋণ পাওয়ার আশায় সমিতিতে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় জমা দেন। গতকাল ছিল ঋণ বিতরণের তারিখ। তবে এর আগেই মঙ্গলবার থেকে আবদুর রহিমের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

সমবায় সমিতিটির গ্রাহক ও পার্বতীপুর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রোডের বাসিন্দা প্রদীপ কুমার রায় (২৫) বলেন, তিনি কম্পিউটার দোকানের ব্যবসা করেন। ওই সংস্থা থেকে তাঁকে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। সংস্থাটিতে সঞ্চয় হিসেবে তিনি সাত হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। গতকাল সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখেন তালা ঝুলছে।

হোটেল শ্রমিক শাহানাজ বেগম (৩২) বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমি সমিতিতে ৩০ হাজার টাকার সঞ্চয় করেছি। বাবা, এখন আমার কী হবে।’ গুলশান নগর মহল্লার রানা নামের আরেক গ্রাহক ঋণ পাওয়ার আশায় এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছিলেন। এখন তিনি দিশাহারা।

সমবায় সমিতিটির গ্রাহক নজরুল ইসলাম (৩০), ফিরোজ হোসেন (২৮), দুকুনী বেওয়া (৫৫), দুলালী বেগম (২৬) ও ঊর্মী বেগম জানান, তাঁরা গতকাল থেকেই আবদুর রহিমের মুঠোফোনে ফোন করছেন। তবে সেটি বন্ধ পাওয়ায় তাঁর হদিস জানতে পারেননি।

গুলশান নগর মহল্লার যে বাড়িতে সমবায় সমিতিটি অবস্থিত, সেটির মালিক মো. শাহীন হোসেন বলেন, ‘প্রায় ছয় বছর ধরে আমার ভবনের নিচতলায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেন আবদুর রহিম। এক মাস আগে তাঁকে বাড়ি ছাড়তে নোটিশ দিয়েছিলাম। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে তাঁর ফোন বন্ধ। ঢাকায় তাঁর ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচের কথা বলে আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকার চেক ধার নিয়েছেন। এখনো তাঁর কাছে দুই মাসের ভাড়া পাই।’

পার্বতীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসনাত খান বলেন, এ বিষয়ে কোনো গ্রাহক এখনো লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।