সেতু ভেঙেছে সাত বছর, সংস্কারের উদ্যোগ নেই 

প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৪ সালে উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের পাকুটিয়া এলাকায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়। 

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাকুটিয়ায় ঝিনাই নদের ওপর নির্মিত এই সেতুর মাঝখানের গার্ডার সাত বছর আগে ধসে পড়েছে। এতে এলাকার এক পাড়ের বাসিন্দারা অন্য পাড়ে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় ঝাওয়াইল ইউনিয়নে ঝিনাই নদের ওপর সেতুটি সাত বছর আগে ভেঙে গেছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও সেতুটি পুনরায় বা নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী। 

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৪ সালে উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের পাকুটিয়া এলাকায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সালের আগস্টে বন্যার প্রবল স্রোতে মাটি সরে গিয়ে সেতুর মাঝখানের দুটি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য শরীফ হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ দীর্ঘদিনেও নেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এর মধ্যে ২০১৫ সালের মে মাসে মাঝখানের গার্ডারসহ সেতুর ৫৪ ফুট নদে ভেঙে পড়ে। নদের পশ্চিম পাড়ে পাকুটিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক, পাকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাওয়াইল মহারানী হেমন্তকুমারী হাইস্কুল, ঝাওয়াইল সুরেন্দ্রবালা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঝাওয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পূর্ব পাড়ে চাতুটিয়া মজিবর উচ্চবিদ্যালয় এবং সীমান্ত বাজার। উভয় পাশের পাকা সড়ক মিশেছে সেতুর পাড়ে। এ সড়ক ধরে সেতু পার হয়ে ঝাওয়াইল ও হাদিরা ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। দুটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঝাওয়াইল বাজার থেকে এই সেতু হয়ে সহজেই পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ী উপজেলা সদরে যাতায়াত করা যেত। সেতুটি ভাঙায় পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে ধনবাড়ী যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে বেশি। 

পাকুটিয়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক আবদুল লতিফ জানান, ঝিনাই নদ ঝাওয়াইল ইউনিয়নকে দুই ভাগ করে রেখেছিল। পাকুটিয়ায় সেতুটি নির্মাণ হওয়ার পর পুরো ইউনিয়নের যোগসূত্র হয়েছিল। এটি ভেঙে যাওয়ার পর বর্ষাকালে খেয়া আর শুকনার মৌসুমে বাঁশের সাঁকো একমাত্র ভরসা। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নদ পারাপার হয়। তিনি দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি জানান। 

ঝাওয়াইল ইউপির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এই এলাকায় আনা হয়েছিল। তাঁকে দেখানো হয়েছে মানুষের যাতায়াত ও পারাপারের দুর্ভোগের চিত্র। এলজিইডি ছয় বছর আগে কারিগরি জরিপ করেছে। কিন্তু সেতুটি পুনরায় নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। 

ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, সেতুটি না হওয়ায় ইউনিয়নবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এটি দ্রুত নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির জানান, ‘সেতুটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) টাঙ্গাইল ও ঢাকা কার্যালয়ে গিয়ে একাধিকবার কথা বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য তিনি নিজের অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করে দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন এলজিইডিকে। সে ব্যাপারেও কোনো সাড়া পাননি। 

গোপালপুর উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, এলজিইডির একটি প্রকল্পের আওতায় আরসিসি গার্ডার সেতু করার প্রস্তাব সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে সেতুটি নির্মাণ করা হবে।