রেলের জমি থেকে কাটা হলো গাছ

কামারপাড়া এলাকার নুরুল আজম নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এসব গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।

অবৈধভাবে কাটা গাছের গুঁড়ি জব্দ করে গাইবান্ধার কামারপাড়া রেলস্টেশন চত্বরে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধায় রেলওয়ের জমি থেকে অবৈধভাবে গাছ কাটা হয়েছে। সম্প্রতি সান্তাহার-লালমনিরহাট রেললাইনের কামারপাড়া রেলস্টেশনের আশপাশ থেকে শতাধিক গাছ কাটা হয়।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কামারপাড়া এলাকার নুরুল আজম নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এসব গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।

কামারপাড়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের কেশালিডাঙ্গা এলাকার প্রভাবশালী নুরুল আজম। তিনি ২০১০ সালে ২০ জুলাই রেলস্টেশনের ২ দশমিক ৮৫ একর জমি ইজারা নেন। জ্বালানি কাঠের গাছ (ইপিলইপিল জাতের গাছ) লাগানোর জন্য তাঁকে ছয় বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়।

ওই বছরের জুলাই মাসেই এ জমিতে জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে তিন-চার হাজার ইউক্যালিপটাস জাতের গাছ লাগান। ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই তার ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ শেষ হলেও তিনি গাছ কাটেননি। বরং ওই বছর ইজারার মেয়াদ নবায়নের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাঁর ইজারা মেয়াদ নবায়ন করেনি।

এদিকে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে রেলওয়ের অনুমতি ছাড়াই ওই সব গাছ কাটতে শুরু করেন নুরুল আজম। এ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সময়ে শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। কামারপাড়া রেলস্টেশনের মাস্টার ও ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় এসব গাছের ২৭টি গুঁড়ি জব্দ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। জব্দ করা গাছের গুঁড়িগুলো কামারপাড়া রেলস্টেশন চত্বরে রাখা রয়েছে। তৎকালীন কামারপাড়া স্টেশনমাস্টার হাইউল মিয়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা লিখিতভাবে জানান। কিন্তু গত দেড় মাসেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। 

কাটা গাছের গুঁড়িগুলো জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 
সুমিত সরকার, কামারপাড়া রেলস্টেশনের মাস্টার 

এ বিষয়ে জানতে নুরুল আজমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা দিয়েও তাঁর সাড়া মেলেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর এক স্বজন দাবি করেন, কিছু গাছ কাটা হয়েছে। ছয় বছরের ইজারার চুক্তি শেষ হওয়ার পর নবায়ন এক বা দুবার করা যায়। নবায়নের জন্য নুরুল আজম আবেদন করেছেন। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নবায়ন করেনি। এরপরও তিনি নবায়ন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবকিছু শতভাগ মেনে তো করা যায় না। কিছু ওপেন থাকে, কিছু গোপন থাকে।

কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান নুরুল আজম রেলের জমিতে জ্বালানি কাঠের গাছ লাগানোর জন্য ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ইউক্যালিপটাস গাছ লাগিয়েছেন। তিনি ইজারা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। সেই ইউক্যালিপটাস গাছও নির্দিষ্ট সময়ে কাটতে পারেননি। তাঁর ইজারার মেয়াদ নবায়নও করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপরও প্রভাব খাটিয়ে গাছ কেটে বিক্রি করছেন। জব্দ করা গাছের গুঁড়ির বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ। 

গাইবান্ধা বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নীতিমালা অনুযায়ী, গাছ মরার উপক্রম ও বয়স বেশি হলে হেলে পড়লে বা উন্নয়নকাজের প্রয়োজনে ঊর্ধ্ব কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে গাছ কাটতে হবে। বিক্রির আগে গাছের মূল্য নির্ধারণ ও নম্বর দিতে হবে। কামারপাড়ার গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, যদিও গাছগুলো রেলওয়ের জায়গায়, এরপরও রেল বিভাগের গাছ কাটার প্রয়োজন হলে, বন বিভাগের মতামত চাইত। কিন্তু কামারপাড়ার বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ কিছু জানতে চায়নি।

কামারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কামারপাড়া রেলস্টেশন হয়ে তিনি প্রতিদিন ট্রেনে করে জেলা শহরে যাতায়াত করেন। রেলস্টেশনের পাশে লাগানো ইউক্যালিপটাস গাছগুলো সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিল। পাশাপাশি ট্রেনে ভ্রমণকারী ও এলাকাবাসী গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারছিলেন। এসব গাছ কাটলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।

এসব বিষয়ে কামারপাড়া রেলস্টেশনের মাস্টার সুমিত সরকার মুঠোফোনে বলেন, রেলওয়ের অনুমতি ছাড়াই গাছগুলো কাটা হয়েছিল। ওই অবৈধ কার্যক্রম শুরুর পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাটা গাছের গুঁড়িগুলো জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।