সিলেটের সব উপজেলা প্লাবিত, পানিবন্দী প্রায় ৭ লাখ মানুষ

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি হু হু করে বাড়ছে। ছড়ার পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে সিলেট নগরের তালতলা এলাকা। গতকাল বিকেলে তোলাছবি: আনিস মাহমুদ

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের ১৩ উপজেলাতেই পানি ঢুকেছে। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও পানি বেড়ে নতুন করে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাব বলছে, জেলায় বন্যাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত লাখ। আগামী তিন দিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল রাত একটায় এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টি প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ১২ উপজেলার ১০২টি ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যায় আক্রান্ত জনসংখ্যা ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭। এর মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৫০ হাজার। জেলায় ১ হাজার ৩২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট নগরে ৮০টি ও জেলায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ অবস্থায় ১৭ হাজার ২৮৫ জন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

আজ বুধবার সকাল পৌনে আটটা পর্যন্ত সিলেটে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি পড়ছিল। এতে জেলার অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এ ছাড়া ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় অনেক এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে বন্যার দেখা দেয়। ৮ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সর্বশেষ গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিতে ফের জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

বানভাসি লোকজন বলেন, জেলার ১৩টি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায়। এ তিন উপজেলা সদর তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেশির ভাগ গ্রামের ভেতরে পানি ঢুকেছে। কোথাও কোথাও পানি হাঁটু থেকে গলাসমান বলে দাবি করেছেন বাসিন্দারা। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় উপজেলাগুলোর বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জেলার ১৩টি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায়। এ তিন উপজেলা সদর তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেশির ভাগ গ্রামের ভেতরে পানি ঢুকেছে। কোথাও কোথাও পানি হাঁটু থেকে গলাসমান পানি।

যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন তৎপর ও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দী লোকদের উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম আজ সকাল সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনো ভারী বৃষ্টি। এতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় আছে। রান্না করা খাবার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।  

আজ সকাল ছয়টায় জেলার সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি-গোয়াইন নদীর ছয়টি স্থানে (পয়েন্টে) পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে জানায় জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়। সংস্থাটির তথ্যমতে, ওই সময়ে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৯৩ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার; কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে শূন্য দশমিক শূন্য ১ সেন্টিমিটার এবং সারি-গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে শূন্য দশমিক শূন্য ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পানি জমায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাত্যহিক কাজে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। গতকাল তালতলা এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

নগরের বন্যা পরিস্থিতি

ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেট নগরের অনেক এলাকায় বন্যার পানি ক্রমেই বাড়ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের তোপখানা, কাজিরবাজার, উপশহর, তেরোরতন, সোবহানীঘাট, যতরপুর, সোনারপাড়া, মাছিমপুর, তালতলাসহ অন্তত শতাধিক এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি ওঠায় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বন্যায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বলে জানায় সিলেট সিটি করপোরেশন।

এদিকে গতকাল রাত নয়টার দিকে নগর ভবনের সভাকক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ত্রাণসহায়তা শুরু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় রান্না করা খাবারসহ ওষুধসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে। দুর্গত এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

আরও পড়ুন

বন্যার্তরা জরুরি প্রয়োজনে নগর ভবনে সরাসরি কিংবা হটলাইন নম্বরে (০১৯৫৮২৮৪৮০৭) যোগাযোগ করতে পারবেন জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘বন্যায় আতঙ্কিত না হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করুন। যাঁদের বাসায় বৈদ্যুতিক লাইন পানির নিচে ডুবে গেছে, তাঁরা স্থানীয় কাউন্সিলরদের জানিয়ে সিটি করপোরেশনের সহায়তা নিন।’

আরও পড়ুন