হকারদের দখলে থাকা সিলেট নগরের ফুটপাতে হাঁটার সুযোগ নেই পথচারীদের

সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাত ও সড়কের এক পাশ দখল করে নানান পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন হকাররা। শনিবার বিকেলে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায়ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট নগরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকার ফুটপাত ও সড়ক হকারদের দখলে চলে গেছে। পাশাপাশি মূল সড়ক দখল করে ভাসমান ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী দোকান বসানোয় এসব স্থান দিয়ে চলতে পথচারীদের বেগ পেতে হচ্ছে। এ ছাড়া এসব স্থানে সব সময় যানজট লেগে থাকছে। পুলিশ ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে পথচারী ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার, সিটি পয়েন্ট, সুরমা মার্কেট, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, লালদীঘিরপাড়, মদিনা মার্কেট, আম্বরখানা, উপশহর ও টিলাগড় এলাকার ফুটপাত এবং মূল সড়কের দুই পাশ দখল করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা নিজেদের পসরা সাজিয়েছেন। এ অবস্থায় পথচারীদের হেঁটে যাওয়ার সুযোগ নেই। বেশির ভাগ পথচারী সড়ক দিয়ে হাঁটছেন। এসব এলাকা ছাড়াও নগরের অন্তত ১৫টি এলাকায় কিছু ফুটপাত দখল করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালাচ্ছেন। দখল হয়ে পড়া ফুটপাতে শাকসবজি, ফলমূল, কাপড়চোপড়, জুতা ও প্রসাধনসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।

বিকেলে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় কথা হয় পথচারী মঈন উদ্দিনের (৪৮) সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন্দরবাজার এলাকায় বিশেষ করে বিকেল বেলা হাঁটার কোনো উপায়ই থাকে না। ফুটপাতের পাশাপাশি মূল সড়ক দখল করে কয়েক শ হকার বসেন। মাঝখানে কিছুদিন ফুটপাত হকারমুক্ত হওয়ায় শান্তিতে হাঁটাচলা করা গেছে। কয়েক মাস ধরে আবার আগের অবস্থা ফিরে এসেছে। এখন সব ফুটপাতই দখল হয়ে গেছে।

সিটি করপোরেশনের সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক বিভাগ ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৭০ হকারকে লালদীঘিরপাড় এলাকায় পুনর্বাসন করে। এসব হকার নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকার বিভিন্ন ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ব্যবসা করতেন। তবে কয়েক মাস এখানে হকাররা বসার পর ক্রেতারা যান না অভিযোগ এনে নিজেদের মতো করে আবার ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন।

জিন্দাবাজার এলাকার দুজন ব্যবসায়ী জানান, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু এর পরপরই আবার ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যায়। তবে কয়েক মাস ধরে অবশ্য তিনি ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালাননি। মূলত দুপুরের পর থেকে হকাররা পসরা বসাতে শুরু করেন। সন্ধ্যার পর পুরো ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যায়। নগরবাসীর ভোগান্তি দূর করতে বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা উচিত বলে তাঁদের মত।

ফুটপাত ছাড়াও সড়কের দুপাশ থাকে হকারদের দখলে। এতে চলাচল হয়ে যায় বেশ কঠিন। শনিবার বিকেলে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে সিটি করপোরেশন, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ সদিচ্ছার প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে যে কারও না কারও পৃষ্ঠপোষকতায় হকাররা ফুটপাত দখল করে ফেলছেন। এরপরও পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সিটি করপোরেশন নিয়মিত অভিযান চালায়। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

যোগাযোগ করলে সিলেট মহানগরের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার জন্য সিটি করপোরেশন ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। তবে আমরাও জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করি।’