ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্যের গাড়িবহরে হামলা, আহত ২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম (বাঁয়ে) এবং হামলায় অভিযুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম ওরফে বুলবুলের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এতে দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নবীনগর উপজেলার ছলিমগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন এবাদুল করিমের ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুর রহমান ও তাঁর গাড়িচালক মো. ফারুক। তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম মমিনুল হক সাঈদের লোকজন এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। তিনি ক্যাসিনো সাঈদ হিসেবেও পরিচিত।

মোহাম্মদ এবাদুল করিম ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তিনি দলের মনোনয়ন পাননি, নির্বাচনও করেননি। মমিনুল হক এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে ভোটের কয়েক দিন আগে তিনি নৌকার প্রার্থী ফয়জুর রহমানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনে ফয়জুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন।

মমিনুল হক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। এবাদুল করিম ও মমিনুল হক—দুজনেরই গ্রামের বাড়ি উপজেলার সলিমগঞ্জে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় লোকজন, আহত ব্যক্তি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন এবাদুল করিমের সমর্থক নবীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল হক সিকদারের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম, জেলা পরিষদ সদস্য নাসির উদ্দিন, নবীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান শিউলি রহমান প্রমুখ।

আমার পেছনের গাড়িতে সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুল করিম ছিলেন। আমি একটি মাইক্রোবাসে ছিলাম। এমপি স্যারের গাড়িকে সাইড দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম, ঠিক তখনই মমিনুল হকের সমর্থকেরা পাঁচটি মোটরসাইকেলে এসে আমার গাড়িতে হামলা চালায়। গাড়ি থেকে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নামানোর চেষ্টা করে। কাচের টুকরা ভেঙে চালক ফারুক ও আমার চোখে পড়ে।
সাইফুর রহমান, হামলায় আহত

সভা শেষ করে এবাদুল করিম সন্ধ্যায় গাড়িতে উঠে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে সামান্য দূরত্বেই সলিমগঞ্জ বাজারের সামনে মমিনুল হকের লোকজন পাঁচটি মোটরসাইকেলে এসে এবাদুল করিমের গাড়িবহরে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা এবাদুল করিমের ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুর রহমানের গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেন। হামলাকারীরা সাইফুর রহমানকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করার চেষ্টা করেন। এতে সাইফুর ও তাঁর গাড়িচালক ফারুক আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে মোটরসাইকেল ফেলে হামলাকারীরা পালিয়ে গেলেও একজনকে আটক করে পিটুনি দেয় জনতা। পরে আটক ওই হামলাকারীও ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই পাঁচটি মোটরসাইকেল জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন

আহত সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় আমার পেছনের গাড়িতে সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুল করিম ছিলেন। আমি একটি মাইক্রোবাসে ছিলাম। এমপি স্যারের গাড়িকে সাইড দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম, ঠিক তখনই মমিনুল হকের সমর্থকেরা পাঁচটি মোটরসাইকেলে এসে আমার গাড়িতে হামলা চালায়। গাড়ি থেকে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নামানোর চেষ্টা করে। কাচের টুকরা ভেঙে চালক ফারুক ও আমার চোখে পড়ে।’

সাইফুর রহমান বলেন, ‘হামলাকারীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র ছিল। তাঁরা সাবেক সংসদ সদস্যকে প্রাণে হত্যার জন্য এই হামলা করেছেন বলে ধারণা করছি। কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। বাকিদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করব।’

আরও পড়ুন

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে এম মমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি কোনো প্রতিপক্ষ নই। ঘটনার ‍২৪ ঘণ্টা পর কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে আমার নাম কেন জড়ানো হচ্ছে, বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছে না।’ মমিনুল হক বলে, ‘গত পাঁচ বছরে বাজার, ঘাট ইজারা দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে তাঁদের (এবাদুল করিম পক্ষ) লেনদেন হয়েছে। অনেকেরই তাঁদের কাছে পাওনা রয়েছে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন, তথ্য পাবেন। এখন পাওনা টাকা আদায়ে কেউ যদি এসব করে থাকেন, এর দোষ তো আমার ওপর চাপানো সঠিক হবে না।’

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম আজ শনিবার রাত সোয়া ১০টায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার সাবেক কাউন্সিলর মমিনুল হকের লোকজন সাবেক সংসদ সদস্যের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছেন বলে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় থানায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন