ভুলে দেওয়া হলো ভিন্ন গ্রুপের রক্ত, সংকটাপন্ন রোগী

ভিন্ন গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন সালেহা বেগম। মঙ্গলবার যশোর জেনারেল হাসপাতালের হাসপাতালের মহিলা পেয়িং ওয়ার্ডে
ছবি: প্রথম আলো

যশোর জেনারেল হাসপাতালে সালেহা বেগম (৭৭) নামের রোগীর শরীরে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়েছে। এতে ওই রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন। ঘটনাটি গত ২০ মে ঘটলেও আজ মঙ্গলবার সকালে নতুন করে রক্ত দিতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

বর্তমানে ওই রোগী জেনারেল হাসপাতালের মহিলা পেয়িং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। ভিন্ন গ্রুপের রক্ত প্রয়োগ করা সালেহা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খড়িঞ্চা হেলাঞ্চি গ্রামের শামসুর রহমানের স্ত্রী।

হাসপাতালের তত্বাবধায়ক হারুন আর রশিদ বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। রোগীর স্বজনেরা মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি করা হবে। কারও কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনেরা জানান, বাধর্ক্যজনিত রোগে গত ২০ মে যশোর মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসকের পরামর্শে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সালেহা বেগমকে। সালেহার শরীরে রক্তশূন্যতার কারণে রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রক্ত দেওয়ার জন্য হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে গিয়ে সালেহার রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করেন স্বজনেরা। সেখানে সালেহার রক্তের গ্রুপ আসে বি পজিটিভ।

এরপর ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সালেহার স্বজনদের বি পজিটিভ রক্তদাতাকে খুঁজে আনতে বলেন। বি পজিটিভ গ্রুপের রক্তদাতাকে এনে সালেহার শরীরে রক্ত দেওয়া হয়। ২০, ২২ ও ২৪ মে তিন দিন তিন ব্যাগ বি পজিটিভ রক্ত দেওয়া হয়। তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর দুই দিন পর সালেহার পরিবার সালেহাকে গ্রামে নিয়ে যান। গ্রামে গিয়ে সালেহার শরীর জ্বালাপোড়া, বমিসহ খিঁচুনি শুরু হয়। এসব উপসর্গের কারণে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হয়। সর্বশেষ গতকাল সোমবার বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে আবারও যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক সালেহাকে আবারও রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দেন।

চিকিৎসকের পরামর্শে আজ সকালে বি পজিটিভ রক্তদাতাকে নিয়ে সালেহাকে রক্ত দিতে গেলে সেই ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাই বলেন, সালেহার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ না। তাঁর রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। এরপর রোগীকে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে রোগীর স্বজনেরা হট্টগোল শুরু করেন। পরবর্তীকালে হাসপাতালের কর্মকর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

ভুক্তভোগী ওই রোগীর মেয়ে শিরিনা আক্তার বলেন, ‘২০ তারিখে এই হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আমার মায়ের রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ বলে জানানো হয়। তাদের কথামতো বি পজিটিভ রক্তদাতা খুঁজে মাকে তিন দিন তিন ব্যাগ রক্ত দিয়েছি। রক্ত দেওয়ার পর মাকে বাড়িতে নিয়ে গেলে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। খিঁচুনি-বমিসহ শরীর দুর্বল হয়ে যায়। স্থানীয় ডাক্তারদের চিকিৎসা নিয়েও তিনি আরও অসুস্থ হয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল আবার হাসপাতালে নিয়ে রক্ত দিতে গেলে হাসপাতাল থেকে বলা হয়, আমার মায়ের রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ নয়, তাঁর রক্তের গ্রুপের এ পজিটিভ।’

শিরিনা আক্তার আরও বলেন, ‘হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ভুলের কারণে আমার মা এখন জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি এখন খুব অসুস্থ। তাঁর শরীরের অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। কিছু খেতে পারছেন না। সুস্থ করার জন্য আমার মাকে হাসপাতালে এনেছি, এখন তাঁর অবস্থা খারাপ। এই ঘটনার বিচার চাই।’

ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের ইনচার্জ চঞ্চল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাসপাতালের ওয়ার্ডের নার্সরা রোগীর রক্তের নমুনা দেন স্বজনদের কাছে। তাঁরা সেই নমুনা নিয়ে ব্লাড ব্যাংকে আসেন। এরপর পরীক্ষা করে রক্তদাতার রক্তের ম্যাচিং করে রক্ত নেওয়া হয়। দাতার রক্ত টেনে স্বজনদের কাছে দিয়ে দিই। তাঁরা ওয়ার্ডের নার্সদের কাছে দিলে তাঁরা রোগীর শরীরে রক্ত দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সালেহার রক্তের গ্রুপ পরিবর্তনের বিষয়টি কীভাবে হলো, বুঝতে পারছি না। আমরা ধারণা করছি, একই নামে একাধিক গ্রুপের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। নমুনা পরীক্ষাকালে এমন ভুল হতে পারে। আবার ওয়ার্ডের নার্সের রক্ত সংগ্রহকালে তাঁরাও ভুল করতে পারেন।’