কাশগাছ বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে অনেকে

এক বিঘা জমির কাশগাছ বিক্রি করে ১৪-১৫ হাজার টাকা আয় হয়। অনাবাদি বালু চরে এমনিতেই জন্মায় এ গাছ।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীর পশ্চিম পারে জগমোহনের চরের কাশবনে ঘুরছে দুই কিশোর
ছবি : প্রথম আলো

কুড়িগ্রাম জেলার ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় জেগে ওঠা প্রায় ৪২০টি চর এখন কাশফুলে ছেয়ে গেছে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এদিকে কাশগাছ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। প্রায় বিনা পুঁজিতে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছেন তাঁরা।

সদর উপজেলার ভোগাডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলা নদীর পশ্চিম পারে জগমোহনের চর। এ চর ভরে গেছে কাশবনে। স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, এক বিঘা জমির কাশিয়া (কাশগাছ) বিক্রি করে তাঁরা ১৪-১৫ হাজার টাকা আয় করেন। অনাবাদি বালু চরে বন্যার পরে কাশগাছ এমনিতেই জন্মায়। পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে গাছগুলোতে ফুল ধরে। এরপর ফুল ঝরে গেলে বিক্রি করে দেন।

জগমোহন চরের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমিতে কাশবন আছে। বন্যার পর পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর এমনিতেই গাছ হয়েছে। বীজ মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। বন্যায় ক্ষতি হয় না। নদী ভাঙলে পানির স্রোতে বীজ ভেসে গিয়ে অন্য চরে গাছ হয়। কাশিয়ার ফুল পড়ে গেলে গাছগুলো কেটে আঁটি বেঁধে বিক্রি করি। মহাজনেরা জমি থেকে কেটে নিয়ে যায়। প্রতি হাজার আঁটি চার থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।’

লামউর যাত্রাপুর ভগবতী চরের আবদুল আজিজ বলেন, কাশিয়ার অনেক চাহিদা। ১০ বছর আগে মানুষ কাশের ছন দিয়ে ঘর, বেড়া বানাত। এখন বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা এসে কিনে নিয়ে যান। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের লোকজন নিয়ে পানের বরজের কাজে লাগাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন কিনে ঘরের ছাউনি ও বেড়া দিচ্ছেন।

ব্রহ্মপুত্র নদের কালির আলগা, খাসের চর, ভগবতীপুর ও দুধকুমার নদের পারে প্রথম আলো চরে গিয়ে দেখা যায়, সাদা ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো চর। প্রথম আলো চরের মকবুল হোসেন বলেন, ১০ বিঘা জমিতে কাশিয়ার (কাশ) আবাদ হয়েছে। এক থেকে দেড় মাস পর কাশিয়া বিক্রি করতে পারবেন। আশা করছেন, এই টাকা দিয়েই ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে পারবেন।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, কাশগাছ সাধারণত গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। এগুলো দিয়ে গ্রামাঞ্চলে ঘরের ছাউনি, বেড়া তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। পানগাছের ছাউনি ও বরজেও ব্যবহার হয়ে থাকে কাশগাছ। এ ছাড়া কাশগাছের ঔষধি গুণ রয়েছে। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাশের মূল পিশে খাওয়া হয়। ব্যথা বা ফোঁড়া হলে কাশের মূলের রস তা উপশম করে।