বৃষ্টি নেই, আমন চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

অনেক কৃষকের চারা বীজতলাতেই নষ্ট হতে বসেছে। তবে কেউ কেউ বাড়তি খরচ করে শ্যালো যন্ত্রের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন।

পঞ্চগড়ে বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে গেছে আমনখেত। খেত বাঁচাতে পাশের ছোট খাল থেকে হাত দিয়েই সেচ দিচ্ছেন দুই কৃষক। বোদা উপজেলার নতুনহাট-বড়ুয়াপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি না হওয়ায় পঞ্চগড়ে রোপা আমন চাষাবাদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। রোপা আমন চাষাবাদের ভরা মৌসুমেও কৃষকেরা ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। এদিকে প্রখর রোদে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২৯ জুন দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১৫৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এর পর থেকেই বৃষ্টি কমতে শুরু করে জেলাজুড়ে। ধীরে ধীরে জেলার বেশির ভাগ আবাদি জমিতে জমে থাকা পানি শুকিয়ে যায়। অনেক কৃষক বীজতলা চারা প্রস্তুত করলেও সেই চারা বীজতলাতেই নষ্ট হতে বসেছে। তবে কেউ কেউ বিকল্প ব্যবস্থায় বাড়তি খরচ করে শ্যালো যন্ত্রের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এবার জেলায় ১ লাখ ১০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৭ শতাংশ আমন চারা রোপণ করতে পেরেছেন চাষিরা।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, এবার চলতি বছরের (২০২২) ১ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৮ দশমিক ৩ মিলিমিটার। অথচ এর আগে গত বছরের (২০২১) ১ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ৫৭৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার।

গতকাল শনিবার জেলার সদর উপজেলার শিকারপুর, মামলাদাম, আমলাহার, ডুডুমারী, শিংপাড়া, বোদা উপজেলার বড়ুয়াপাড়া, নতুন হাট, কামারের হাট, ভাসাইনগর, আটোয়ারী উপজেলা বলরামপুর, লক্ষ্মীদ্বারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি না থাকায় বেশির ভাগ জমিই অনাবাদি হিসেবে পড়ে আছে। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের আমন বীজতলাগুলো প্রখর রোদে হলুদ বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে। এসব বীজতলার চারা রোপণ করলে পর্যাপ্ত ফল না–ও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

কৃষকেরা বলছেন, জেলায় সাধারণত মধ্য আষাঢ় থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমন ধানের চারা জমিতে রোপণ করা হয়। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় তাঁরা আমন চাষাবাদ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। মূলত বর্ষাকালে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে কৃষকেরা রোপা আমন চাষ করে থাকেন। সাধারণত বীজতলায় তৈরি হওয়া চারা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জমিতে লাগানো হয়। কিন্তু অনেক কৃষকের চারার বয়স দেড় মাস পেরিয়ে গেছে।

সদর উপজেলার ডুডুমারী এলাকার কৃষক গোলাম মোরশেদ বলেন, ‘১৮–১৯ দিন আগে যখন জমিতে পানি ছিল, তখন মাত্র দেড় বিঘা জমিতে আমনের চারা লাগিয়েছি। ওই খেতগুলোই এখন রোদে পুড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে অন্য জমিগুলো চাষও করতে পারছেন না আর নতুন চারাও রোপণ করতে পারেননি। এদিকে বীজতলায় চারার বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় সেগুলোও এখন নষ্টের পথে। এভাবে চলতে থাকলে আমনের চারারও সংকট দেখা দেবে।’

বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের নতুনহাট-বড়ুয়াপাড়া এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সব জমি শুকিয়ে গেছে। এক বিঘার মতো আমন চারা রোপণ করেছি। সেগুলো বাঁচাতে এখন হাত দিয়েই সেচ দিতে হচ্ছে। দিনভর যে রোদ বাইরে, থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক (সিনিয়র অবজারভার) জীতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে তেঁতুলিয়ায় সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া ২০ জুলাইয়ের পর থেকে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমন চাষ কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না বলে আশা করছেন তাঁরা।