সাফসেরা সৌরভীকে ফুলের মালায় বরণ গ্রামবাসীর

সাফ অনূর্ধ্ব–১৬ টুর্নামেন্ট সেরা খেলােয়াড় সৌরভী আকন্দকে স্বাগত জানায় গ্রামের বাসিন্দারাছবি: সংগৃহীত

নেপালের কাঠমান্ডুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব–১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পয়নশিপে দ্যুতি ছড়িয়েছেন সৌরভী আকন্দ (প্রীতি)। দলকে শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি ৯ গোল করে হয়েছেন টুর্নামেন্ট–সেরা খেলোয়াড়। দেশকে শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসানো এই স্ট্রাইকার আজ শুক্রবার ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন। চ্যাম্পিয়ন–কন্যাকে ফুলের মালায় এবং উষ্ণ ভালোবাসায় বরণ করে নেন গ্রামবাসী ও পরিবারের সদস্যরা।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে ফেরেন সৌরভী। গ্রামবাসী তাঁকে গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে স্বাগত জানিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন। আসার পথে সৌরভীকে হাত তুলে অভিনন্দন জানিয়েছেন গ্রামের মাঠে কাজে থাকা লোকজনও।

সৌরভী আকন্দ আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেক্স ট্রেনে করে গফরগাঁও স্টেশনে আসছেন বলে বাড়িতে খবর পাঠান। এ খবর পেয়ে সকালে গ্রামের বিভিন্ন বয়সের ১৫-২০ জন বাসিন্দা এবং তাঁর স্বজনেরা স্টেশনে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। ট্রেন থেকে নামার পর সেখানে সৌরভীকে স্বাগত জানানো হয়।

স্টেশন চত্বরের পাশে স্থানীয় শিশুরা সৌরভীর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানায়। পরে সেখান থেকে একটি মোটরসাইকেল বহরে করে ১৫-২০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে এই ফুটবলারকে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় সৌরভীকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। দুই হাত তুলে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় ওই কিশোরীকে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সৌরভীদের বাড়িতে গেলে মা মোছা. মনোয়ারা আক্তার জানান, তাঁর চার সন্তানের মধ্যে সৌরভী আকন্দ সবার ছোট ও খুব আদরের। ছোটকাল থেকে মেয়েকে কখনো কাছছাড়া করেননি মা। এখন দেশে ও বিদেশে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কারণে মেয়েকে খুবই কম কাছে পান মনোয়ারা। ফোনেই কেবল মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এবার প্রায় ছয় মাস পর মেয়েকে কাছে পেয়েছেন। মেয়ে বাড়ি ফিরছে বলে তাঁর পছন্দের খাবার রান্না করা হচ্ছে। বাড়িতে ঈদের আগেই আনন্দ উৎসব চলছে।

বাড়ি ফেরার পর ফুলের তোড়ায় মেয়েকে অভিবাদন জানান মা মনোয়ারা আক্তার। শুক্রবার দুপুরে নান্দাইলের জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলাে

কয়েক দিন আগে মুঠোফোনে কথা বলার সময় মনোয়ারা আক্তার এ প্রতিবেদকের জানিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবার রক্ষণশীল। গ্রামের কোনো মেয়ে ফুটবল খেলত না। তাই তাঁর ছোট মেয়েটি ছেলেদের পোশাক পরে স্কুলের সহপাঠী বা গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলত। খেলতে খেলতে মেয়েটি এতটা উচ্চতায় পৌঁছে যাবে, তা কেউ ভাবতে পারেনি।

সৌরভীর বড় ভাই মো. জহিরুল বলেন, ‘গ্রামের মানুষ আমাদের বাড়িটি আকন্দবাড়ি বলে চেনে। বাড়িটি এখন ফুটবলার সৌরভীর বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। বাংলাদেশ দলে খেলেছে তাঁর বোন। তাই পরিবার ও পাড়ার লোকজনকে সৌরভীদের খেলা দেখানোর জন্য বাড়িতে ৩২ ইঞ্চি টেলিভিশন কেনা হয়েছে। আরও কেনা হয়েছে আকাশ ডিটিএইচ ডিশ অ্যান্টেনা। খেলার দিন হলে আমাদের বাড়ির উঠানে প্রতিবেশীদের সমাগম হয়। সৌরভীর পায়ে বল গেলে হইচই শুরু হয়।’

ফুটবলার সৌরভীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গ্রামবাসী। বারঘড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মতিউর রহমান বলেন, সৌরভীর খেলা বাচ্চাদের উজ্জীবিত করেছে। গ্রামের শিশুরা এখন ফুটবলের ভক্ত হয়ে পড়েছে। আল মামুন নামের এক বাসিন্দা জানান, খেলাধুলায় নজর দিলে এই গ্রাম থেকে আরও সৌরভী পাওয়া যাবে।