আরবের খাবার ‘খাবসা’ টাঙ্গাইলের গ্রামে, স্বাদ নিতে ছুটে যান শহরের মানুষ

টাঙ্গাইলের নামদার কুমুল্লি বাজারের শামীম ভূঁইয়ার দোকানের খাবসা স্থানীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয়
ছবি: প্রথম আলো

শামীম ভূঁইয়া সৌদি আরবের একটি রেস্তোরাঁতে চাকরি করতেন। সেখানে কাজ করার সময় আরবের বিভিন্ন খাবার তৈরি করা শিখেছিলেন। করোনাকালে ওই রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি দেশে চলে আসেন। নিজ বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নামদার কুমুল্লি গ্রামে কিছু দিন পর চালু করেন একটি রেস্তোরাঁ। আরবের জনপ্রিয় খাবার খাবসা বানানো শুরু করেন। শামীমের খাবসার সুনাম গ্রাম ছাড়িয়ে এখন টাঙ্গাইল শহরসহ আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রতিদিন শহর থেকে নামদার কুমুল্লি গ্রামে ভোজনরসিকেরা আসেন খাবসার স্বাদ নিতে। খাবসা অনেকটা বিরিয়ানির মতো। এটি তৈরি করা হয় বাসমতি চাল দিয়ে। চিকেন ও মাটন—দুই ধরনের খাবসা হয়। এতে ঘি, কাজুবাদামসহ মুখরোচক বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়। প্রতি প্লেট মাটন খাবসা ৩২০ টাকা এবং চিকেন খাবসা ২৩০ টাকা করে নেওয়া হয়।

পরিবারের অভাব দূর করতে শামীম ভূঁইয়া ১৯৯৪ সালে মালয়েশিয়া যান। সেখানে গিয়ে পেনং শহরে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ নেন। সাত বছর কাজ করার পর ২০০১ সালে দেশে ফিরে আসেন। দেশে কিছু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। ২০০৩ সালে সৌদি আরবে যান।

শামীম ভূঁইয়া জানান, নিজের গ্রামের বাজারে আড়াই হাজার টাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চালু করেন ‘জান্নাত রেস্টুরেন্ট’। ওই দোকানের বিশেষ আকর্ষণ খাবসা। অল্প সময়ের মধ্যেই খাবসার খবর ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইল শহরসহ আশপাশের এলাকায়। কয়েক মাসের মধ্যে দেখা যায়, খাবসা খেতে টাঙ্গাইল শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছেন নামদার কুমুল্লি গ্রামে।

সম্প্রতি খাবসা খেতে আসা জুলহাস উদ্দিন নামের একজন বলেন, কয়েক মাস আগে এক বন্ধু কাছে এখানকার খাবসার খবর পান। প্রথমবার খেয়ে খুব ভালো লাগে। তারপর মাঝেমধ্যেই বন্ধুরা মিলে চলে আসেন খাবসা খেতে।

নিজের রান্না করা খাবসা হাতে শামীম ভূঁইয়া
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়ার মোল্লা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, শামীম ভুঁইয়ার তৈরি খাবসা খুব সুস্বাদু। তাই শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে হলেও মানুষ সেখানে যান। সামাজিক, পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও এলাকার মানুষ এখান থেকে খাবসা নিয়ে যান।

শামীম ভূঁইয়া বলেন, তিনি নিজে গ্রাম থেকে ছাগল ও মুরগি কেনেন। নিজেই রান্নার কাজ করেন। ফলে কম দামে তিনি ভালো খাবার দিতে পারেন। শহরে দোকান দিলে ভাড়াসহ খরচ অনেক বেশি হতো। তখন খাবারের দামও বেশি রাখতে হতো। এখন প্রতিদিন তাঁর আট থেকে দশ হাজার টাকা বেচা-বিক্রি হয়। খাবসা ছাড়াও তাঁর দোকানে তেহারি, চাওমিন ও মুড়িভর্তা হয়।

সরকারি এমএম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা বলেন, বেশির ভাগ সময় দেখা যায় যে প্রবাসীরা দেশে ফিরে তাঁদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারেন না। অনেকেই বিদেশ থেকে অর্জিত অর্থ ভেঙে চলেন। টাকাপয়সা শেষ হলে হতাশায় ভোগেন। কিন্তু শামীম ভূঁইয়া তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গ্রামেই রেস্তোরাঁ করেছেন। এটা ভালো।