ফেসবুকে ‘আত্মহত্যার ঘোষণা’ দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেলেন ছাত্রলীগ নেতা

বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক লাইভে ‘আত্মহত্যার ঘোষণা’ দেওয়ার পর সংগঠন থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে সুজন। গতকাল শনিবার জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পাঠানো নোটিশে তিন দিনের মধ্যে আশিকুরকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হেমায়েত উদ্দীন সেরনিয়াবাত ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যার ঘোষণা এবং অনৈতিক ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে আশিকুরের বিরুদ্ধে। তিনি কেন এমন আচরণ করেছেন তা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।

গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে গিয়ে আত্মহত্যার ঘোষণা দেন আশিকুর। অবশ্য গতকাল বিকেলে তাঁর ফেসবুকে গিয়ে লাইভের ভিডিও ও এ–সংক্রান্ত কোনো পোস্ট দেখা যায়নি। জেলা ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, লাইভের পর গতকাল দুপুরে আশিকুরকে জেলা ছাত্রলীগের নেতারা ডেকে কৈফিয়ত চান ও তিরস্কার করেন। এরপর তিনি এসব পোস্ট মুছে ফেলেন।

ফেসবুক লাইভে আশিকুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার আত্মহত্যার কারণ পারিবারিক নয়, পারিবারিকভাবে আমি সুখে আছি। কিন্তু এমন অবস্থায় পড়েছি যে নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর কাছেও কিছু বলতে পারছি না। আমার আত্মহত্যার কারণ রুটি-রুজির জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ যে জায়গা থেকে আমার আয়ে সংসার চলত, সেই পথ শনিবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওই জায়গা হারিয়ে ফেলব কাল (শনিবার)। তাই কোনো পথ না পেয়ে আমাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।’

১১ মিনিটের ওই ফেসবুক লাইভে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে আশিকুর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কাল (শনিবার) হয়তো আত্মহত্যা করতে পারি, কারণটা ডায়েরিতে লেখা থাকবে... হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও...।’ ফেসবুকে আশিকুরের এই পোস্টটি তিনি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাত নেতাকে ট্যাগ করেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া বাস টার্মিনালের একটি অংশ ও চরকাউয়া খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণ করতেন আশিকুর রহমান। এই দুই স্থানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ ও মহানগর ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে সম্প্রতি দ্বন্দ্ব হয় আশিকুর রহমানের। ফলে চরকাউয়া বাস টার্মিনাল ও খেয়াঘাটের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কায় পড়েন আশিকুর রহমান।

জানতে চাইলে আশিকুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ওই ঘোষণা দিয়েছি। এর সঙ্গে পারিবারিক বা রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই।’ চরকাউয়া বাস টার্মিনাল ও খেয়াঘাটের নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়ে আশিকুর রহমান বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। একটি মহল তাঁর বিরুদ্ধে এসব ছড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করা গুরুতর অন্যায়। আশিকুর রহমানের ওই ঘোষণায় তাঁরা বিব্রত। এ জন্য তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।