ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার মথুরাপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাঁশের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সড়ক পারাপার হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারের ছবি
প্রথম আলো

দুই পাশে দুটি বাঁশ ধরে দাঁড়িয়ে চারজন। বাঁশ দেখে দাঁড়িয়ে যায় সড়কে চলাচল করা গাড়ি। এরপর মাঝের ফাঁকা অংশ দিয়ে লাইন করে বেরিয়ে সড়ক পারাপার হয় শিশুর দল। দ্রুতগতির যানবাহন এড়িয়ে এভাবে প্রতিদিন বিদ্যালয়ের সামনের ব্যস্ত সড়ক পার হচ্ছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী সড়কের মথুরাপুর-২ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এভাবে সড়ক পারাপার হতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির পাশে রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়, মথুরাপুর পাবলিক হাইস্কুল, রোড মহাবিদ্যালয় ও একটি ময়দা মিল রয়েছে। বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে কোনো গতিরোধক নেই। নেই সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ও চিহ্ন। সড়ক দিয়ে বেপরোয়াভাবে চলছে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, অটোরিকশা, ভটভটিসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। বিদ্যালয়ের শুরুর সময় শিশুদের নিয়ে অভিভাবকেরা হাত উঁচিয়ে গাড়ি থামিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন। ছুটির সময় দুপুর ১২টার দিকে বাঁশ দিয়ে যানবাহন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক পার হতে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে শিক্ষক-কর্মচারীদের।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৬ সালে স্থাপিত মথুরাপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয়টি শ্রেণিতে ২৪২ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষার জন্য ১৫ বছর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে সড়ক পারাপারের এ পন্থা বের করেন। সেই থেকে এভাবেই শিক্ষার্থীরা সড়ক পার হচ্ছে।

সহকারী শিক্ষক শারমিন সুলতানা বলেন, বিদ্যালয় শুরু ও ছুটির সময় দুই দফা শিক্ষার্থীদের এভাবে সড়ক পার করানো হয়। প্রতিদিন সড়ক পারাপারে পালাক্রমে তিনজন করে শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের সহযোগিতা করেন বিদ্যালয়ের পিয়ন।

এরপরও সড়ক পারাপারে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি কমে গিয়েছে-এমনটি মনে করেন না বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক লায়লা বানু। তিনি বলেন, সড়ক পারাপারে এত সতর্ক থাকার পরও বেপরোয়া যানবাহন অনেক সময় বাঁশ দণ্ডের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে চলে আসে। গত মাসেই ওই সড়কে চলাচল করা দ্রুতগামী একটি ইজিবাইক শিশুদের প্রায় ওপর উঠে গিয়েছিল। এতে দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবিবা ইসলাম বলে, ‘স্কুলের সামনের এই রাস্তা দিয়ে অনেক জোরে গাড়ি চলে। বাঁশ ধরে আপারা রাস্তা পার করে দিলেও অনেক সময় ভয় লাগে।’

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের বাবা আবদুর রহিম বলেন, প্রাথমিকের শিশুরা চঞ্চল প্রকৃতির। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে যানবাহনের গতিনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা দরকার। জেলা শহরের সঙ্গে তিনটি উপজেলার যোগাযোগের পথ হওয়ায় ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী সড়কটিতে সারা দিন যানবাহনের আনাগোনা লেগে থাকে। তাঁরা বিদ্যালয়ের দুই পাশে গতিরোধক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। বিদ্যালয়ের সামনে গতিরোধক নির্মাণ করা সম্ভব না হলে অন্তত বিদ্যালয় শুরু ও ছুটির সময় সেখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকার দাবি জানান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারগিস নাহার বলেন, তারা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসান মো. আবদুল হান্নান বলেন, বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথ ঝুঁকিমুক্ত করতেই হবে। শুরু ও ছুটির সময় বিদ্যালয়ের সামনে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ কীভাবে নেওয়া যায়, তা পরিষদে আলোচনা করা হবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল ইসলাম বলেন, সড়ক-মহাসড়কে গতিরোধক নির্মাণে মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও শিশুদের পথ নিরাপদ করতে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, ভেবে দেখবেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টির সামনে ট্রাফিকের ব্যবস্থা করা যায় কি না বিবেচনা করে দেখবেন।