উকিল সাত্তারের আসনে আ.লীগের মঈনের জয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে নানা কারণে সবচেয়ে আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ (সরাইল–আশুগঞ্জ) আসন। এবার আসনটি ছাড় দিলেও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সুবিধা করতে না পেরে জামানত হারিয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন জয়ী হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব, বিনয়, সততা, স্পষ্টবাদিতা ও জনপ্রিয়তা এবং প্রার্থীর প্রতি তরুণ-যুবসমাজ আকৃষ্ট হওয়া ইত্যাদি কারণে মঈন উদ্দিন জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া দুই সংসদ সদস্য, একাধিক জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা মঈন উদ্দিনের বিরোধিতা করার বিষয়টিও সাধারণ ভোটাররা ভালোভাবে নেননি। তাই ভোটারদের সহানুভূতি পেয়েছেন তিনি।

মঈন উদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহিরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। ১৯৯০ সালের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের আলম-কামরুল-মেহেদী পরিষদে ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান উপনির্বাচনে সদ্য বিজয়ী সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম। আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান আলম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এই আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মনোনয়ন পান দলটির অতিরিক্ত মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি সদর উপজেলার বাসিন্দা। এখানে রেজাউলের শ্বশুর জাতীয় পার্টির টানা দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা (ঈগল) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এই আসনে ভোটের মাঠে ছিলেন ধানের শীষ প্রতীকের সাবেক দুই সংসদ সদস্যের দুই সন্তান বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আবুল হাসানাত ও বিএনপির দলছুট সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে তৃণমূল বিএনপির মাইনুল হাসান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মঈন উদ্দিন।

নির্বাচনে কলার ছড়ি প্রতীকে মঈন উদ্দিন ৮৪ হাজার ৬৭ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিয়াউল হক মৃধা পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৪৩১ ভোট।

মঈনকে ঠেকাতে সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটির সভাপতি নাজমুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, সব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা যুবলীগের একাংশের সাবেক সভাপতি আশরাফ উদ্দিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শের আলম এবং আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছফি উল্লাহ মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী সরাসরি মাঠে নামেন এবং বিরোধিতা করেন। এই নেতারাসহ জেলা আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী পক্ষও জিয়াউল হকের পক্ষে সরব থেকে কাজ করে।