সিত্রাংয়ের প্রভাবে এখনো জলাবদ্ধতা, আবাদ করতে পারছেন না কৃষকেরা

সিত্রাংয়ের পর পর দেড় মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও শরীয়তপুরের অনেক মাঠে এখনো পানি নামেনি। সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মধ্যপাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সিত্রাং আঘাত করেছিল চলতি বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। এই দুর্যোগের পর দেড় মাসের বেশি সময় কেটে গেছে। অথচ সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝরা বৃষ্টির পানি এখনো জমে আছে শরীয়তপুর জেলার অন্তত তিন হাজার হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে পানি জমে থাকায় ফসল আবাদ করতে পারছেন না কৃষকেরা।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলায় ৮২ হাজার ৯৪৯ হেক্টর আবাদযোগ্য কৃষিজমি আছে। এর মধ্যে নিচু জমি আছে ৯ হাজার ৫৭৫ হেক্টর। বর্তমানে কৃষকেরা মাঠে বোরো ধানের বীজতলা, বোরো ধান, রবি শস্য এবং তেল, ডাল ও মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ করছেন। তবে নিচু এলাকার ওই তিন হাজার হেক্টর এলাকায় কৃষকেরা কোনো ফসল আবাদ করতে পারছেন না।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় শরীয়তপুরে ২৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছিল। এ সময় অনেক ফসলি জমিতে পানি জমে যায়। অধিকাংশ জমির পানি নেমে গেলেও নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত তিন হাজার একর জমির পানি এখনো নামেনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির মধ্যে মাছের খামার (ঘের) করার কারণে জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়েছে। অনেক স্থানে খাল–নালা বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় বালু ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি নির্মাণের ফলে ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়েছে।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরমধ্যপাড়া এলাকার একটি ফসলের মাঠে ১০০ একর জমি রয়েছে। মাঠের চারদিকে গ্রাম। বালু ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ ও গ্রামের একপাশে মাছের ঘের করার কারণে ওই জমিগুলোর পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়েছে। ওই মাঠে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবু বকর মোল্যার পরিবারের আট একর ফসলি জমি আছে।

বোরো মৌসুম চললেও তিন হাজার হেক্টর এলাকায় কৃষকেরা কোনো ফসল আবাদ করতে পারছেন না
ছবি: প্রথম আলো

আবু বকর মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমিতে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি থাকবে, আবার তা নেমে যাবে, আমরা সময়মতো আবাদ করব—এটা প্রাকৃতিকভাবেই হয়। কিন্তু এখন জমি থেকে পানি নামার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পানি জমে থাকার কারণে আমাদের ফসল আবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিকমতো আবাদ করতে না পারলে এ বছর অনেক কৃষক পথে বসে যাবেন।’

আংগারিয়া এলাকার মস্তফা ব্যাপারী বলেন, সিত্রাংয়ের সময়ের বৃষ্টিতে তাঁর দুই বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে আমন ধান নষ্ট হয়ে যায়। পানি নেমে গেলে শর্ষের আবাদের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু দেড় মাসের বেশি সময়েও পানি নামেনি।

শরীয়তপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড ও তুলাশার ইউনিয়নের মধ্যে একটি ফসলের মাঠে ২০০ একর জমি আছে। স্থানীয় কৃষকেরা ওই মাঠে ফসল আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পাশের খাল ও একটি হালট ধরে ওই মাঠের পানি নেমে যেত। তবে বছরখানেক আগে খালের একটি অংশ ভরাট হয়ে গেছে। এদিকে হালটের ওপর মাছের খামার করা হয়েছে। এতে বিশাল ওই মাঠে এখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নীলকান্দি এলাকার কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, ‘বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর মাটি নরম থাকে। সেখানে আমরা বোরো ধানের বীজতলা করি। ওই বীজতলা দিয়ে ধান আবাদ করা হয়। কিন্তু জমির পানি এখনো নামেনি। তাই এ বছর বোরো ধান আবাদ করতে পারব কি না, সেটা বুঝতে পারছি না।’

জানতে চাইলে শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রাসুল প্রথম আলোকে বলেন, সিত্রাংয়ের সময় শরীয়তপুরে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। তখন অনেক ফসলের মাঠ তলিয়ে গিয়েছিল, তবে এখনো কিছু জমিতে জলাদ্ধতা আছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।