সন্ধ্যার মধ্যে পদত্যাগ করেন, না হলে কালকে করেন: শামসুজ্জামান
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় শেষ। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, কখন কী হয় বলা যায় না। আজকে পারলে আজ সন্ধ্যার মধ্যে পদত্যাগ করেন, না হলে কালকে করেন। ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। পদত্যাগ না করলে তারাই (জনগণ) পদত্যাগে বাধ্য করবে।’
আজ বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনায় নগরের কেডি ঘোষ রোডের জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু এসব কথা বলেন। অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে একযোগে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
অবিলম্বে পদত্যাগ না করলে করুণ পরিণতি হবে উল্লেখ করে শামসুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ ও শাসক দলের ক্যাডার দিয়ে গণতন্ত্র ও মুক্তিকামী বিএনপি নেতা-কর্মীদের আর দমিয়ে রাখা যাবে না। দেশের জনগণ প্রতিরোধ করতে মাঠে নেমে পড়েছে। অবৈধ সরকার সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে আবারও একদলীয় শাসন কায়েম করার যে ষড়যন্ত্র করছে, দেশের জনগণ সেটা হতে দেবে না।’
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনব্যবস্থার দাবি জানিয়ে শামসুজ্জামান বলেন, এই সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচন নয়। যেকোনো মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগের সংবাদ পাবে দেশের জনগণ। বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। সেই কর্মসূচি থেকে সরকার পতনের পরবর্তী বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বেলা তিনটা পর্যন্ত এই গণ-অবস্থান কর্মসূচি চলে। এতে খুলনা মহানগর বিএনপি, জেলা বিএনপিসহ বিভাগের অন্য জেলার বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। আজ সকাল থেকেই বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হন।
গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মেহেদী আহমেদ বলেন, জনবিচ্ছিন্ন এ সরকার এখন কাগজের বাঘ। দেশ এখন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এমপি-মন্ত্রীরা পুলিশ ছাড়া চলাচল করতে পারছেন না। কোনো বাহিনীর সদস্য ছাড়া তাঁরা মাঠে নামলে বাংলার জনগণের রোষানলে পড়ে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামিম, সহতথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, সহধর্ম সম্পাদক অমলেন্দু দাশ প্রমুখ।
গণতন্ত্র মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচি
এদিকে খুলনা নগরের উমেশ চন্দ্র গ্রন্থাগারের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। আজ বেলা ১১টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। গণতন্ত্র মঞ্চের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেএসডির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. লোকমান হাকিম বলেন, এই সরকার সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। আর ফ্যাসিবাদী সরকার নয়, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন। এ লক্ষ্যেই এবারের আন্দোলন শুরু হয়েছে।
কর্মসূচিতে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী সরকার অপকর্ম ঢাকার জন্য ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আরও একটি নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। জনগণ এর সমুচিত জবাব দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সরকারের পদত্যাগ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন তীব্রতর করবে। নেতারা জাতীয় সংসদ বাতিল, রাজবন্দীদের মুক্তি ও বিরোধী দলের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলেন।
জেলা জেএসডির সভাপতি শেখ আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেএসডির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল লতিফ খান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হালিম, জেলা জেএসডির সাধারণ সম্পাদক স ম রেজাউল করিম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মুনির চৌধুরী, খালিশপুর থানা জেএসডির সাধারণ সম্পাদক সাইমুন ইসলাম প্রমুখ।