চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ডেকে নিয়ে মারধর, হাসপাতালে ভর্তি

মারধরে আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু আহাদ আল মামুনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ সোমবার রাতেছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু আহাদ আল মামুনের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করা হয়েছে। আজ সোমবার রাত আটটার দিকে কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার এলাকায় এ হামলা হয়। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা কিশোর কুমার ঘোষের (জগত) নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। আহত অবস্থায় তাঁকে কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে আগামী বুধবার কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আল মামুন মোটরসাইকেল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। এ পদে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। আতাউর কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই।

আবু আহাদ আল মামুন সাংবাদিকের বলেন, রাতে তিনি কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার এলাকায় তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের কার্যালয়ে বসে ছিলেন। সেখানে প্রচার মাইকের ভাড়া দেওয়া–সংক্রান্ত কাজ করছিলেন। এ সময় সাত-আটজন যুবক কক্ষে প্রবেশ করে বাইরে ডেকে নেন। বাইরে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকেন। তাঁরা বলেন, ‘ভোটে কেন দাঁড়াইছিস, কে দাঁড়াইতে বলেছে।’ কিছু বলার আগেই তাঁরা মামুনের মাথা, বুকে, পিঠে আঘাত করেন। অপহরণেরও চেষ্টা করা হয়। ঘটনার সময় তিনি জগৎ ও হাসিব খাঁর নাম শুনেছেন।

আবু আহাদ আল মামুন আরও বলেন, এর কিছুক্ষণ পর সেখানে সড়কের ওপর আরও ২০-২৫ জন যুবক হাজির হয়। তাঁদের মধ্য থেকে আরও কয়েকজন তাঁকে মারতে থাকেন। এ সময় আশপাশে লোকজন থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। একপর্যায়ে হামলাকারীরা চলে যান। তিনি স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হাসপাতালে যান। বিষয়টি তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ফোনে জানান।

আবু আহাদের মামাতো ভাই তিতাস বলেন, পৌর ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগতের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন এ হামলা চালিয়েছেন। মারধরের একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারালে হামলাকারীরা চলে যান। পরবর্তীকালে উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হামিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সামান্য কিলঘুষি মারধরের চিহ্ন দেখা গেছে। রক্তাক্ত কোনো জখম হয়নি। তাঁকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর কিশোর কুমার ঘোষ জগতের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীকালে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দধি মিষ্টান্ন ভান্ডারে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।

বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘যিনি আমার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন, তিনি কোনো শক্ত প্রার্থী নন। তাহলে আমার দলের নেতা-কর্মী বা সমর্থকেরা তাঁকে কেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা আমার দলের কেউ নয়, তাদের আমি চিনিও না। পুলিশ তদন্ত করে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।’

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অবস ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগীর সঙ্গে হাসপাতালে কথা হয়েছে। তিনি কয়েকজনের নাম বলেছেন। তাঁদের ধরতে পুলিশের দুটি দল ইতিমধ্যে মাঠে কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে, তাঁদের ধরা সম্ভব হবে। মামলা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর ওপর প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন নাকি অন্য কোনো পক্ষ ঘটিয়ে কোনো স্বার্থ হাসিল করার পাঁয়তারা করছে, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী প্রার্থী ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাঁকে মামলা দিতে বলা হয়েছে। তিনি যদি নিরাপত্তা চান, তাহলে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।