‘ভোট ডাকাতির’ আশঙ্কায় প্রার্থীরা, প্রশাসন ও আ.লীগ বলছে ‘সুযোগ নেই’

ভোট গ্রহণের জন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। আজ মঙ্গলবার সকালে বগুড়া পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ে
ছবি: সোয়েল রানা

রাত পেরোলেই বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ। ইতিমধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হয়েছে। তবে নির্বাচনের আগের দিনেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন না প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজনের বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা, ভয়ভীতি দেখানো ও হামলার অভিযোগ দেওয়া হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রতিকারের উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ তাঁদের। এখন ‘কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির’ আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

অবশ্য রিটানিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম সব অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটির মতো অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের কোনোটি রিটানিং কর্মকর্তা হিসেবে নিজে থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছেন, কোনোটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আবার কোনোটি ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

দলীয় সিদ্ধান্তে গোলাম মো. সিরাজের পদত্যাগের কারণে শূন্য ঘোষিত এই আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান লড়ছেন নৌকা নিয়ে। তবে তাঁর সঙ্গে নেই ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাসদ ও জাপা। জাসদ থেকে মশাল প্রতীকে লড়ছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক এবং লাঙ্গল প্রতীকে লড়ছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর।

আরও পড়ুন

প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা হলেন বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ (ট্রাক), গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন (মাছ), বাংলাদেশ খেলাফতে আন্দোলনের প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম (বটগাছ), জাকের পার্টির মো. ফয়সাল বিন শফিক (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদার রহমান (আপেল), আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম (একতারা) এবং সরকার বাদল (কুড়াল)। আগামীকাল সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ হবে।

নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিনে গতকাল রাতে ফেসবুক লাইভে আসেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে পরিচিত আবদুল মান্নান। তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতি করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে অন্য নির্বাচনী এলাকা থেকে ভাড়াটে মাস্তান নিয়ে এসে ভোট ডাকাতির ওই প্রস্তুতির অভিযোগ তোলেন তিনি। ভোট ডাকাতি ঠেকাতে নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

আরও পড়ুন

কেন্দ্র দখল কিংবা ভোট ডাকাতির সুযোগ কেউ পাবে না বলে মনে করছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১ হাজার ৮০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি মোতায়ন থাকবে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিট মাঠে থাকবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান ও মাসুদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, কর্মীদের ভয়ভীতি, হামলা-মারধরসহ নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে রিটানিং কর্মকর্তার কাছে নানা অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না। এ কারণে নতুন করে আর অভিযোগ করছেন না।

সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন একতারা প্রতীকের প্রার্থী আলোচিত হিরো আলমও। তিনি বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আসনটিতে যেকোনোভাবে জিততে মরিয়া। এতে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। ভোটারও ভীতসন্ত্রস্ত।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করতেই পারেন, তবে সেই অভিযোগের ভিত্তি থাকতে হবে। ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। কোনো কেন্দ্রে বহিরাগতদের ভাড়া করে নিয়ে এসে কারও ভোট কি মেরে নেওয়া সম্ভব? ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ ছাড়া অন্য কারও পক্ষে ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পুরোপুরি স্ট্যান্টবাজি।

রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া-৬ আসনে ভোটারসংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন। বুধবার ১৪৩ ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ১৭টি বুথে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সব প্রস্ততি শেষ হয়েছে। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ১৪৩ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১ হাজার ১৭ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ২ হাজার ৩৪ জন পোলিং কর্মকর্তা। ৭৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিপুর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ কিছু ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কার কথা জানিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে তাঁরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।