জিবে স্বাদ লেগে থাকে ফরিদপুরের যে প্যারা সন্দেশের

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সূর্যমুখী দোকানের প্যারা সন্দেশ
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সূর্যমুখী দোকানের প্যারা সন্দেশ একবার খেলে জিবে স্বাদ লেগে থাকে। পৌর সদরের ওয়াপদার মোড় থেকে নাটমন্দিরগামী সড়কে রেজিস্ট্রি অফিসের পাশে দোকানটির অবস্থান।

১৯৮০ সাল থেকে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন বোয়ালমারীর কামারগ্রাম মহল্লার বাসিন্দা নবকুমার সাহা। তখন দোকানের কোনো নাম ছিল না। সে সময় লোকজন এ দোকানের সন্দেশকে ‘নবকুমার সাহা সন্দেশ’ নামে চিনত। দোকানের নাম ‘সূর্যমুখী’ রাখা হয় ২০১৩ সালে। সংসারে সচ্ছলতা আনতে নবকুমার মাগুরার মহম্মদপুরে তাঁর নানা সতীশ সাহার কাছে প্যারা সন্দেশ বানানোর তালিম নেন। তারপর তিনি বোয়ালমারীতে এসে রেজিস্ট্রি অফিসের পাশে দোকানটি চালু করেন।

নবকুমার সাহার তিন ছেলে। বড় ছেলে সুকুমার সাহা (৬৫) ও মেজ ছেলে উত্তম সাহা (৬০) দোকানটি চালান। তাঁদের সাহায্য করেন খালাতো ভাই সনজিত কুমার সাহা (৪০)। দুই ভাই মূলত সন্দেশ বানান। অন্যরা সহায়তা করেন।

সুযোগ পেলেই আমি এ সন্দেশ খাই। এ সন্দেশ একবার খেলে মুখে স্বাদ লেগে থাকে।
রুখসানা পারভীন, বোয়ালমারী, ফরিদপুর

প্যারা সন্দেশ কীভাবে বানান, তা জানতে চাইলে দুই ভাই বলেন, প্রথমে দুধের ছানা তৈরি করা হয়। সঙ্গে মেশানো হয় খেজুরের গুড়। ৪০ কেজি দুধ থেকে ৬ কেজি প্যারা সন্দেশ বানানো যায়। প্রথমে প্রতিটি সন্দেশ বিক্রি হতো পাঁচ টাকায়। এরপর দাম বেড়ে প্রতিটি সন্দেশ ১০ টাকা, ১৫ টাকা, ২০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন একেকটি সন্দেশ ২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। এক কেজি সন্দেশ বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়।

সুকুমার সাহা বলেন, তাঁদের তৈরি সন্দেশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোক এসে খান। সঙ্গে করে নিয়ে যান। অনেকে দেশের বাইরেও নিয়ে যান। তাঁদের প্যারা সন্দেশ বেশি যায় ভারত ও সৌদি আরবে।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি ‘সূর্যমুখী’ দোকানে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে টিনের বেড়া ও ওপরে টিনের চাল দিয়ে বানানো পুরোনো একটি দোকান এটি। সামনের কাচের বক্সে সাজিয়ে রাখা হয়েছে থরে থরে সন্দেশ। সঙ্গে অন্য মিষ্টিও আছে। ঘরের ভেতর কাঠের ৪টি টেবিল ও ১৪টি চেয়ার পাতা। তাতে বসে সন্দেশ খাচ্ছেন মিষ্টিপ্রেমীরা।

সন্দেশ খেতে আসা সালথা উপজেলার সোনাপুরের সুমন কুমার শীল বলেন, ‘আমি বোয়ালমারীতে কোনো কাজে এলেই এই দোকানে আসি সন্দেশ খেতে। এ সন্দেশের কোনো তুলনা নেই। বিভিন্ন জায়গায় প্যারা সন্দেশ নামে অনেক সন্দেশ খেয়েছি, কিন্তু এই স্বাদ আর কোথাও পাইনি।’

আরও পড়ুন

বোয়ালমারীর শিবপুর মহল্লার বাসিন্দা গৃহবধূ রুখসানা পারভীন বলেন, ‘সুযোগ পেলেই আমি এ সন্দেশ খাই। এ সন্দেশ একবার খেলে মুখে স্বাদ লেগে থাকে।’

বোয়ালমারী পৌরসভার মেয়র সেলিম রেজা বলেন, ‘সূর্যমুখীর প্যারা সন্দেশ আমাদের বোয়ালমারীর ঐতিহ্য। সবচেয়ে বড় কথা, শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এ সন্দেশের একই স্বাদ। কোনো হেরফের নেই। কোনো অতিথি এলে এ সন্দেশ দিয়েই আপ্যায়ন করা হয়। আত্মীয়বাড়িতে নিয়ে যাই সূর্যমুখীর প্যারা সন্দেশ।’