প্রথম আলো সত্য বলে। এই সত্য বলার সাহস ধরে রাখতে হবে। প্রথম আলোকে মানুষ বিশ্বাস করে। প্রথম আলোর খবরে মানুষ আস্থা পায়। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে মানুষ প্রথম আলোর কাছ থেকেই সত্য জেনেছে। গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিতে প্রথম আলোকে ভূমিকা রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে প্রথম আলো আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। পত্রিকাটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সুনামগঞ্জ ও ভোলায় এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, রাজনীতিক, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
সুনামগঞ্জ
হেমন্তের সন্ধ্যা। শীতের আমেজ। অতিথিদের কেউ কেউ নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে আসেন। গরম কফি পানের সঙ্গে মেতে ওঠেন খোশগল্পে। একসময় নানা শ্রেণি–পেশার মানুষে মুখর হয়ে ওঠে সুনামগঞ্জ শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
সুধী সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া কলেজজীবন থেকে প্রথম আলো পড়েন। প্রথম আলোর সঙ্গে বেড়ে ওঠার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ সুধী হিসেবে ডাকায় ধন্যবাদ। প্রথম আলো দেশের কথা, মানুষের কথা বলছে; ভবিষ্যতে মানুষের পাশে থেকে সত্য বলে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।’
পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ বলেন, ‘প্রথম আলোর সঙ্গে কিন্তু মানুষ সব সময় ছিল। এ কারণেই প্রথম আলো প্রথম। প্রথম আলোর সঙ্গে মানুষ আছে।’
প্রবীণ আইনজীবী হুমায়ুন মনজুর চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম আলোকে হৃদয়ে ধারণ করি। আমরা বিশ্বাস করি, প্রথম আলোর সংবাদ সত্য। যখন শুনি প্রথম আলো বিক্রি হবে, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। প্রথম আলো সব বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাবে। প্রথম আলোর সঙ্গে আমরা আছি, থাকব।’
আইনজীবী সালেহ আহমদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে যেন প্রথম আলো কখনো আপস না করে। এখানে যেন কখনো নিরপেক্ষ ভূমিকা না রাখে।’ সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিতে প্রথম আলোর ওপর মানুষ যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেটি প্রথম আলোকে পালন করতেই হবে বলে মন্তব্য করেন জেলা মহিলা পরিষদের সহসভাপতি সঞ্চিতা চৌধুরী।
প্রথম আলোর সুনামগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক খলিল রহমানের সঞ্চালনায় সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. চান মিয়া ও তৈয়বুর রহমান, সাবেক সিভিল সার্জন সৈয়দ মোনাওয়ার আলী, প্রবীণ শিক্ষক যোগেশ্বর দাস, কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দ মহিবুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাদীর আহমদ, পৌর জামায়াতের আমির আবদুস সাত্তার মো. মামুন, সুনামগঞ্জের শাহজালাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এনামুল কবীর, আইনজীবী মতিয়া বেগম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পাঠকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পাঠকেরা প্রথম আলোর কাছে তাঁদের প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। পাঠকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘আমরা পাঠকের মতামতকে গুরুত্ব দিই। আপনাদের জন্য, পাঠকদের জন্য প্রথম আলো আজ এই পর্যায়ে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো সরকারের সময়ই শান্তিতে ছিলাম না, স্বস্তিতে ছিলাম না। আপনারাই আমাদের সাহস, শক্তি। প্রথম আলোর সব স্বীকৃতি, প্রাপ্তি আপনাদের সমর্থন, সাহস ও সহযোগিতার জন্য। সব অপপ্রচার, অপচেষ্টাকে পেছনে ফেলে প্রথম আলো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চায়।’
ভোলা
ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি শুভেচ্ছা বিনিময়, প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও উপহার বিতরণ—তিন পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি নেয়ামতউল্যাহ।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিদ্যালয়ের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে উঠান বৈঠক আয়োজন, সাপ্তাহিক ইসলামি পাতা, উপকূলীয় জেলা ভোলার সংবাদকে গুরুত্ব প্রদান, ভুয়া খবর প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রথম আলোকে নানা পরামর্শ দেন অতিথিরা। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচনে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি প্রথম আলো গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করবে।
সুধী সমাবেশে ভোলার নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, শিক্ষিত সমাজ গঠনে কাজ করছে প্রথম আলো। দেশের রাজনীতি, সমাজ, শিক্ষা ও মানুষের মনের কথা তুলে ধরে উন্নয়ন যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে পত্রিকাটি। সাহসী ভূমিকার কারণে প্রথম আলো আজ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পত্রিকায় পরিণত হয়েছে। চলমান রাজনীতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সঠিক চিত্র যেন প্রথম আলোতে প্রতিফলিত হয়, এটাই পাঠকদের প্রত্যাশা।
জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘যখন সরকার স্বৈরশাসকের চরিত্র ধারণ করে, তখন জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয় গণমাধ্যমকে। প্রথম আলোকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা আছে। সঠিক তথ্য যেন পাঠকের কাছে পৌঁছায়, প্রথম আলোর প্রতি এ প্রত্যাশা রাখি।’
ভোলা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহাবুব আলম বলেন, প্রথম আলোর বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন ও সাহিত্য পাতা অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি মফস্সলের লেখকদের আরও গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রভাষক ও নাট্যকর্মী ইভান তালুকদার বলেন, মফস্সল সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা উচিত। সম্ভব হলে একটি আলাদা সাপ্তাহিক পাতা চালু করলে প্রশংসিত হবে।
সুধী সমাবেশে পাঠকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রথম আলোর হেড অব ডিপ নিউজ রাজীব আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা অনলাইনকে আরও গতিশীল করছি। দ্রুত, নির্ভরযোগ্য খবর পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। পাঠকের ভালোবাসাই আমাদের শক্তি।’
সুধী সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির ভোলার সাধারণ সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ, প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক মুহাম্মদ শওকাত হোসেন, ভোলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম, জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহ আব্দুর রহিম নুরুন্নবী, জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আদিল মাহমুদ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আজম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।