কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজ বর্জনের ঘোষণা শিক্ষক সমিতির

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা–কর্মীদের নিয়ে দপ্তরে প্রবেশের সময় শিক্ষক সমিতির নেতারা বাধা দেন। এ সময় উপাচার্য ও নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সমিতির নেতাদের ধস্তাধস্তি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। গতকাল রোববার দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনেছবি: সংগৃহীত

শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের অপসারণের দাবিতে সব প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্যসহ দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। হামলার ঘটনায় শিক্ষক সমিতি আগামীকাল মঙ্গলবার মানববন্ধন করবে বলে জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভা শেষে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন শিক্ষকদের এই সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মো. আবু তাহের। সভায় শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন।

আরও পড়ুন

মো. আবু তাহের বলেন, উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শিক্ষকদের কেউ উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে কোনো ধরনের কার্যক্রমে সহযোগিতা করবেন না। শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় সমিতি থেকে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী ও আইকিউএসির পরিচালক অধ্যাপক রশিদুল ইসলাম শেখের সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। তাঁদের কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, সে জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে।

অধ্যাপক মো. আবু তাহের আরও বলেন, যাঁরা শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছেন, তাঁদের সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেওয়া হবে। শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১টায় মানববন্ধন হবে। তবে গুচ্ছের প্রথম বর্ষের ভর্তির কার্যক্রম এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘হামলাকারীদের ও সন্ত্রাসী উপাচার্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি আমরা।’

গতকাল রোববার বেলা একটার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি হয়। উপাচার্যকেও কনুই দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাত দফা দাবি আদায়ে গতকাল দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। তখন উপাচার্যপন্থী একদল শিক্ষক ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে যান। তাঁরা উপাচার্যের কক্ষের তালা খোলেন এবং প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশপথে এসে উপাচার্যকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন শিক্ষক সমিতির নেতারা তাঁদের বাধা দেন। এ সময় শিক্ষকদের ওপর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা করেন ওই নেতা-কর্মীরা। এ-সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ প্রথম আলোর কাছে এসেছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হানকে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছেন। এ সময় মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম হামলার শিকার হন। হামলায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র নন্দী ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান বিশ্বাস ও পার্থ সরকারকে তাঁদের ধাক্কা দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামিমুল ইসলামকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বিপ্লব দাস ও আমিনুর রহমান বিশ্বাস ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন।

এ দিকে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ দপ্তরে যাননি উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টর।