কারাগারে থেকেও তিনি নাশকতার মামলায় আসামি

শফিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সমর্থক হলেও কোনো পদ–পদবি নেই শফিকুল ইসলামের (৩৫)। বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের একটি মামলায় ৮ থেকে ২২ নভেম্বর কারাগারে ছিলেন শফিকুল। কিন্তু ১৫ নভেম্বর নান্দাইলে নাশকতার ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে আসামি করেছে পুলিশ। কারামুক্তির পর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে থাকছেন।

পুলিশ বলছে, নাশকতার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব নাম পাওয়া গেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কেউ কারাগারে থেকে আসামি হলে বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা দেখবেন। তদন্তে বেরিয়ে এলে তাঁর নাম বাদ যাবে।

আরও পড়ুন

আদালত, এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক একটি ঘটনায় শফিকুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশ্লিষ্ট আদালতে একটি মামলা করেন তাঁর স্ত্রী। ওই মামলায় ৮ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন শফিকুল ও তাঁর মা খোদেজা খাতুন। কিন্তু আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর পর থেকে ময়মনসিংহ কারাগারে ছিলেন তাঁরা। গত ২২ নভেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে তাঁরা জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন। আদালতের নথিপত্র দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে প্রথম আলো।

১৫ নভেম্বর নান্দাইল উপজেলার ঝালুয়া সেতুর পূর্ব পাশে অবরোধের সমর্থনে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে দাহ্য তরল পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিউল্লাহ মির্জা বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় শফিকুল ইসলামকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

মামলার এজাহারে বেআইনিভাবে একত্র হয়ে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড ও নাশকতার মাধ্যমে জননিরাপত্তা বিঘ্ন ও যানবাহন ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়। ঘটনার সময় হিসেবে ১৫ নভেম্বর বেলা ৩টা ২৫ মিনিটের কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ওই সময় তিনি শফিকুল কারাগারে ছিলেন। ২২ নভেম্বর কারামুক্ত হওয়ার পর তিনি নাশকতার মামলার বিষয়টি জানতে পারেন। মামলার কথা শুনে তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি।

গতকাল বুধবার শফিকুলের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকজন মামলার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। শফিকুলের মাকেও বাড়িতে পাওয়া গেল না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, কারাগারে আটক থাকার পরও নাশকতার ঘটনায় শফিকুলকে আসামি করায় তাঁরা বিস্মিত। কেউ শত্রুতা করে মামলায় নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।

আরও পড়ুন

শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নাশকতার মামলায় তাঁকে কীভাবে আসামি করা হয়েছে, তিনি বুঝতে পারছেন না। গ্রেপ্তারের ভয়ে এখন বাসায় থাকছেন না। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, আমার মতো অনেক নির্দোষ ব্যক্তিকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’

জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা যুবদলের একাংশের আহ্বায়ক মো. জহিরুল হক বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও আসামি করা হচ্ছে। তাঁদের কীভাবে হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে, এই মামলা সেটি প্রমাণ করে দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শফিকুল বিএনপির একজন সমর্থক। তিনি কোনো পদ–পদবিতে আছেন কি না, তাঁর জানা নেই।

আরও পড়ুন

মামলার বাদী উপপরিদর্শক শফিউল্লাহ মির্জা প্রথম আলোকে বলেন, নাশকতার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই সময় যাঁদের নাম পাওয়া গেছে, তাঁদের মামলায় আসামি করা হয়েছে। এখন কেউ যদি কারাগারে থেকে আসামি হন, তাহলে সেটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) তদন্ত করে দেখবেন। পুলিশ কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানি করছে না বলে তিনি দাবি করেন।