বাড়িতে না ফিরতে ‘অপহরণ’ নাটক, ৬ বছর পর উদ্ধার

ইদ্রিস আলী মোল্যা
ছবি: সংগৃহীত

এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় মা-বাবা বকুনি দিয়েছিলেন। তাই অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন তিনি। বাড়িতে আর না ফেরার জন্য ‘অপহরণের’ নাটক সাজান। অবশেষে ঘটনার ছয় বছর পর তাঁকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোর। গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম ইদ্রিস আলী মোল্যা (২৩)। তিনি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সারুটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পিবিআই যশোর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন ইদ্রিস আলী মোল্যা। এতে তাঁর মা-বাবা বকাঝকা করেন। তখন ইদ্রিস আলী মোল্যা অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। ২০১৯ সালে ইদ্রিস তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জে থাকেন বলে তাঁদের জানান। বছরে কয়েকবার বিভিন্ন নম্বর থেকে তিনি তাঁর মা-বাবাকে কল করতেন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তিনি বাড়ি ফিরে না আসায় তাঁর মা-বাবা, ভাইবোন ও স্বজনেরা উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় ছিলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছরের ৩০ জুন সকালে ইদ্রিস আলী মোল্যা তাঁর ছোট ভাইয়ের মুঠোফোনে কল করে নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনি বাড়িতে আসছেন বলে জানান। পরিবারের সদস্যরা তাঁর জন্য কেশবপুরের মোহনপুর বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। এরপর গত ৪ জুলাই অন্য একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে কল আসে ইদ্রিসের ভাইয়ের মুঠোফোনে। ওই ব্যক্তি ইদ্রিসের ভাইকে বলেন, ইদ্রিস আলী মোল্যাকে খোঁজাখুঁজির দরকার নেই, সে ভালো আছে। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে।

পরে ১৩ জুলাই অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ইদ্রিস আলীর ব্যবহৃত ‘স্পন্দিত চাদর’ নামের ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পুনরায় দুই লাখ টাকা দিলে ইদ্রিস আলীকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান। এরপর পরিবারের লোকজন যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এতে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় ইদ্রিসের পরিবার। পরে তাঁকে উদ্ধার করার জন্য পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়। আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করে।

অবশেষে মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার প্রিমিয়ার স্টিল মিল থেকে পিবিআই তাঁকে উদ্ধার করে। গত বুধবার তাঁকে আদালতে নেওয়া হলে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। বুধবার আদালতের মাধ্যমে বাড়ি ফিরে গেছেন তিনি।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, ইদ্রিস আলী মোল্যাকে কেউ অপহরণ করেনি বা মুক্তিপণ চায়নি। পরিবারের প্রতি রাগে–ক্ষোভে ইদ্রিস নিজেই তাঁর ভাইকে ফোন করে বাড়ি না ফিরতে নাটক সাজিয়েছিলেন।