গাজীপুরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আটকে রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবি, গ্রেপ্তার ১৪

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে মুঠোফোনসহ বিভিন্ন কিছু উদ্ধার করা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে চাকরিপ্রার্থীদের আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১। গতকাল বুধবার রাতে গাজীপুর নগরের গাছা থানাধীন বোর্ড বাজারের সরিবপুর এলাকায় বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় নারী, পুরুষসহ ২৭ জন ভুক্তভোগীকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধারের দাবি করেছে র‍্যাব।

গ্রেপ্তার ১৪ জন হলেন আস্তাকুল আমিন আনাম (৩০), মো. তৌফিক (২৪), ইমরান হোসেন (১৯), মো. জুনায়েদ (২১), রনি আহমেদ (২১), সালাউদ্দিন সরকার (২০), জিসান হোসেন (২১), মো. রায়হান (১৮), মো. আতিক হাসান (১৯), আজিজুল হাকিম (২৩), সম্পা আক্তার (২৪), মোছা. বিউটি খাতুন (২১), বর্ষা খাতুন (১৯) ও তাহসিন আক্তার (২০)।

অভিযান শেষে গতকাল রাত ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১-এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন ও তাঁর পূর্বপরিচিত এক নারী ওই কোম্পানির অস্থায়ী কার্যালয়ে আসেন। পরে কোম্পানিটির লোকজন দুজনকে আটক করে শারীরিক নির্যাতন করেন। নির্যাতনের ভিডিও সাকিবের বাবার মুঠোফোনে পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে ফোন করে তাঁর পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় সাকিবের বাবা ২০ মার্চ ছেলেকে উদ্ধারের জন্য গাজীপুর র‍্যাব-১-এ আবেদন করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে সাকিবসহ ২৭ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান এবং তাঁদের ব্যবহৃত একাধিক মুঠোফোনের মাধ্যমে অনলাইনে ভুয়া চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। গাজীপুর নগরের গাছা থানাধীন রশিদ মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসাকে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছিলেন তাঁরা। আত্মগোপনের জন্য তাঁরা প্রায়ই নিজেদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ রেখে আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের বাসায় অবস্থান করতেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা এমন ২৭ জনকে পেয়েছি, যাঁদের সঙ্গে একইভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাকিবকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা চলছিল। আমরা এখানে ৪ থেকে ৫ শতাধিক মানুষের আবেদন ফরম পূরণ করা অবস্থায় পেয়েছি। প্রতিটি ফরম পূরণ বাবদ চক্রটি ৬০০ টাকা করে নিয়েছে। এরপর নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে ও মার্কেটিং কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পেতে ১৫ হাজার টাকা করে নিত।’

র‍্যাবের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে একটি ‘টর্চার সেল’ পাওয়া গেছে। যেখানে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ফেরত চাইলে তাঁদের সেই কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। টর্চার সেলে দেশীয় অস্ত্র, ইলেকট্রনিক শক দেওয়ার কেব্‌ল ও লাঠিসোঁটা পাওয়া গেছে।