মাটি খুঁড়তে গিয়ে মানুষের হাড়গোড় উদ্ধার, ওপরে লাগানো ছিল লাউ-কুমড়ার গাছ

জয়পুরহাট জেলার মানচিত্র

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় গোসলখানা নির্মাণের জন্য মাটি খনন করার সময় মাথার খুলিসহ মানুষের হাড়গোড় পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার ধরঞ্জী বাজার এলাকার সামছুল ইসলামের বাড়ির সামনের জায়গা থেকে হাড়গোড়গুলো উদ্ধার করে পুলিশ। এগুলো একজন পুরুষ মানুষের হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ ঘটনার পর থেকে সামছুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া এক দম্পতি পলাতক। বাড়ির মালিক সামছুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। হাড়গোড়গুলো প্রায় পাঁচ মাস আগে নিখোঁজ ধরঞ্জী গ্রামের তরুণ নাঈম হোসেনের (২২) হতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা ধারণা করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধরঞ্জী বাজার এলাকার বাসিন্দা সামছুল ইসলাম তাঁর বাড়ি ভাড়া দিয়ে অন্যত্র থাকতেন। রেজ্জাকুল নামের এক ব্যক্তি স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে ভাড়া থাকেন। সম্প্রতি সামছুল ইসলাম বাড়ি মেরামতের কাজ করছিলেন। কাজ শেষে কিছু নির্মাণসামগ্রী বেচে যায়। তখন সামছুল ইসলাম বাড়ির সামনে গাছ-গাছালিতে ঢেকে থাকা স্থানে গোসলখানা নির্মাণের জন্য রাজমিস্ত্রিদের বলেন।

গোসলখানার স্থান খোঁড়ার কাজ করছিলেন নির্মাণশ্রমিক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই স্থানটিতে লাউ, কুমড়া, পুঁইশাকের গাছ ছিল। গাছগুলো বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ঘেরা ছিল। এসব তুলে ফেলে দেওয়ার পর জায়গাটি দেবে যায়। কোদাল দিয়ে কোপ দিতে গেলে কাপড় বেঁধে যায়। কোদাল তোলার পর ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। তখন প্রধান মিস্ত্রিকে তিনি ঘটনাটি জানান। প্রধান মিস্ত্রি এসে কোদাল দিয়ে কোপ মারার পর আরও দুর্গন্ধ বের হয়। তিনি বাড়িওয়ালাকে ঘটনাটি জানান।

স্থানীয় লোকজন জানান, খবর পেয়ে থানা–পুলিশ এসে গতকাল রাত ৯টায় মাটি খুঁড়ে মাথার খুলিসহ হাড়গোড় উদ্ধার করে। এ সময় উৎসুক লোকজন সেখানে ভিড় জমান। হাড়গোড়ের আকৃতি ও সঙ্গে পাওয়া জামা দেখে স্থানীয় লোকজন ধারণা করেন এগুলো গ্রামের নিখোঁজ তরুণ নাঈম হোসেনের হতে পারে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধরঞ্জী গ্রামের প্রয়াত মাসুদ রানার ছেলে নাঈম হোসেন গত ২২ এপ্রিল নিখোঁজ হন। পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুজি করে কোথাও তাঁর সন্ধান পাননি। এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল নিখোঁজ নাঈম হোসেনের মামা অহিদুল ইসলাম পাঁচবিবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল হক বলেন, উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়গুলো পুরুষ মানুষের বলে ধারণা করা হচ্ছে। এগুলো নিখোঁজ নাঈম হোসেনের বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা। নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। বাড়ির মালিক পুলিশ হেফাজতে। তবে বাড়ির ভাড়াটিয়া রেজ্জাকুল ওরফে রাজ্জাক ও তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে পাওয়া যায়নি।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইশতিয়াক আলম সংবাদিকদের বলেন, ‘হাড়গোড়গুলো কার তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারব বলে আশা করছি।’