‘ছবিটার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে, এ জন্য আনন্দটা বেশি’

ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে তোলা ছবিটি ছেপেছে ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ
ছবি: সাদিক খান

ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনের অংশ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ঘরমুখী মানুষের তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ‘নাড়ির টানে, বাড়ির পানে’ শিরোনাম দিয়ে এমন একটি ছবি নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করেছিলেন সাদিক খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকের ভালো লেগে যায় ছবিটি। কিছুক্ষণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে অনেকের ফেসবুক ওয়ালে। সেখান থেকে ছবিটি জায়গা করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ আজ বুধবার প্রথম পাতায় প্রধান ছবি হিসেবে ছেপেছে জামালপুরের তরুণ আলোকচিত্রী সাদিক খানের ছবিটি। এতে পরিচিতজদের প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। সাদিক খান নিজেও আনন্দিত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগেও আমার কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। মানুষের প্রশংসা পেয়েছি। ছবিটির সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে। এ জন্য আনন্দ অনেক বেশি। এটি বিশ্বের গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।’

সাদিক খানের বাড়ি জামালপুর জেলায়। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। ছবি তোলা তাঁর নেশা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার দীর্ঘ সময়টায় ক্যাম্পাস ও আশপাশের অনেক বিষয় নিয়ে ছবি তুলেছেন। তিনি জানান, তখন ছবি তোলার ভালো ক্যামেরা ছিল না। এখন একটা ভালো ক্যামেরা হয়েছে নিজের। যে কারণে শুধু নিজের পছন্দের বিষয়গুলোর ছবি তুলতেই গতকাল মঙ্গলবার তিনি ময়মনসিংহ যান। সেখানে গিয়ে কেওয়াটখালী এলাকায় ঈদের আগে যাত্রীবোঝাই ট্রেনের ছবিটি তোলেন।

আলোকচিত্রী সাদিক খান
ছবি: সংগৃহীত

সাদিক খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আগেও ঈদের আগে এভাবে মানুষকে বাড়ি যেতে দেখেছি। এ রকম ছবিও তুলেছি। এবার নতুন ক্যামেরা পাওয়ার পর আমি এ রকম একটা ছবি তোলার পরিকল্পনা নিয়েই আসি। সকাল সকাল বের হয়ে পড়ি। পরে সকাল ১০টার দিকে ছবিটি তুলি।’

ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বলাকা কমিউটার ট্রেনটিতে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড়ের ছবিটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। এরপর ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। সাদিক জানান, কিছুক্ষণ পর টেলিভিশন সাংবাদিক জ. ই. মামুন ফোন করেন সাদিক খানকে। তিনি ছবিটি গণমাধ্যমে প্রকাশের অনুমতি চাইলে সাদিক সে অনুমতি দেন। এরপর বিকেলে টেলিগ্রাফ থেকে যোগাযোগ করা হয় সাদিকের সঙ্গে। ছবিটি ছাপার কথা বললে তিনি সম্মতি দেন।

সাদিক জানান, প্রথম আলো অনলাইনসহ আরও কিছু গণমাধ্যমে এর আগেও তাঁর ছবি প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রেলসেতুর একটি ছবি অনেকেই প্রশংসা করেন। কক্সবাজার সৈকতে বৃদ্ধ এক দম্পতির সমুদ্রস্নানের ছবি তুলেও তিনি আলোচিত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করলেও চাকরি করা নিয়ে তাঁর কোনো পরিকল্পনা নেই। এখনো স্বাধীনভাবে ছবি তুলে বেড়াতে ভালোবাসেন বলে জানান। লেখালেখিও করেন তিনি। সামনে তাঁর একটি বই প্রকাশিত হবে। ভবিষ্যতে সিনেমা বানানো সাদিকের প্রধান স্বপ্ন।