সংসদ সদস্য জাফর আলমের চাঁদাবাজি-দখল বন্ধের দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংবাদ সম্মেলন। আজ দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমের চাঁদাবাজি-দখল তৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ ছাড়া চকরিয়া-পেকুয়ায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। আজ বুধবার দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চকরিয়া আদালতের আইনজীবী চেম্বারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতা—মাতামুহুরী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন বাবুল (৬০) ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল দরবেশীর (৪০) ওপর হামলার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হামলার শিকার মহসিন বাবুল। তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে ইকবাল দরবেশীকে নিয়ে তিনি মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনজীবী শহীদুল্লাহ চৌধুরীর চেম্বারে যান। ওই সময় সংসদ সদস্য জাফর আলমের নির্দেশে তাঁর ভাতিজা জিয়াবুল হক, ভাগনে মিজানুর রহমান, স্থানীয় যুবলীগ কর্মী শওকত ওসমানের নেতৃত্বে কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে আইনজীবীর চেম্বারে ঢুকে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এ সময় অস্ত্রধারীরা তাঁদের কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদের পক্ষে দলীয় সমাবেশে অংশ নিতে নিষেধ করেন।

সালাহ উদ্দিন আহমদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ উপলক্ষে ৬ নভেম্বর চকরিয়াতে সালাহ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে বিশাল রোড শো ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মহসিন বাবুল বলেন, হামলার সময় সন্ত্রাসীরা মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রথমে ইকবাল দরবেশীকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। আহত হয়ে ইকবাল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ওই সময় ইকবালকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে তাঁকে (বাবুল) একটি পিস্তল দিয়ে গুলি করার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তাঁকেও (বাবুল) মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। তাতে বাবুলের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পান। হামলায় ইকবাল দরবেশী বাঁ চোখে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে চকরিয়া থানায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সরওয়ার আলম প্রমুখ।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ৬ নভেম্বর চকরিয়াতে তাঁর নেতৃত্বে রোড শো ও সমাবেশ হয়। বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ দেখে সংসদ সদস্য জাফর আলম প্রতিহিংসার পথ বেছে নেন।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সরওয়ার আলম বলেন, ‘জাফর আলম রামপুরা মৌজার চিংড়ি ঘেরে চাঁদাবাজি, লোকজনের জমি দখল এবং দলের ত্যাগী নেতাদের ওপর অত্যাচার–নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। জাফর আলম চিংড়ি ঘের থেকে মাসে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন ভাতিজা জিয়াবুলের মাধ্যমে। জিয়াবুল সব সময় তিনটি গাড়িতে সন্ত্রাসী নিয়ে চলাফেরা করেন। আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাফর আলমের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চাঁদাবাজি বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৭ নভেম্বর হামলার বিষয়েও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অভিহিত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার বিষয়ে সংসদ সদস্য জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার সফরে আসছেন। মাতারবাড়ীতে দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন। সেই জনসভাতে চকরিয়া-পেকুয়া থেকে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ নিয়ে যাবেন তিনি। মূলত প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সালাহ উদ্দিন আহমদ হামলার ঘটনা সাজিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

তাঁর ভাতিজা জিয়াবুল কয়েক দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন জানিয়ে জাফর আলম বলেন, তাহলে চকরিয়াতে জিয়াবুলের নেতৃত্বে হামলা হয় কীভাবে? ১৫ বছর ধরে সালাহ উদ্দিন আহমদকে এলাকাতে দেখেননি দাবি করে জাফর আলম বলেন, নির্বাচন এলে তিনি প্রার্থী হন। দলের কতিপয় লোকজন নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করেন। যদিও এর আগে দলের তিনবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি (সালাহউদ্দিন), কিন্তু একবারও নৌকাকে জেতাতে পারেননি।

চিংড়ি ঘের থেকে মাসে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার চাঁদা আদায়, লোকজনের জায়গাজমি দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে কেউ চাঁদাবাজি এবং দখলের প্রমাণ দেখাতে পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।

দুই আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলার বিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মহসিন বাবুল ও ইকবাল দরবেশীর ওপর হামলার বিষয়টি জেনেছেন। আহত দুই নেতার সঙ্গে কথা বলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।