এক যুগ ধরে খানাখন্দে ভরা সড়ক, ভোগান্তি

সড়কের খানাখন্দে জমে থাকে বৃষ্টির পানি। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত মঙ্গলবার গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

কোনাবাড়ী-সুরাবাড়ি জুমাঘর পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়ক। সড়কটি পড়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫, ৬, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায়। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি নগরীর চারজন কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকলেও তাঁরা এক যুগেও সংস্কার বা উন্নয়নকাজ করতে পারেননি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারীদের।

সড়কটির আট কিলোমিটার এলাকাজুড়েই কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক খানাখন্দ। এসব খানাখন্দ কাদামাটি আর জমে থাকা পানিতে থইথই করে। শুকনা মৌসুমে ধুলাবালুতে ভরে যায়। এক যুগ ধরে এমন চিত্র গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থেকে কাশিমপুর হয়ে সুরাবাড়ি সড়কের। সড়কটি পথচারী, যানবাহনের জন্য যেন এক ভোগান্তির নাম।

গত মঙ্গলবার দুপুরে আট কিলোমিটার সড়কটি মেরামতের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় মানববন্ধন করেন নগরবাসী। এতে আশপাশের শত শত বাসিন্দা, শিক্ষার্থী ও যানবাহনের চালকেরাও সেই মানববন্ধনে যোগ দেন। এ সময় এলাকাবাসী চলতি মাসের মধ্যে কাজ শুরু না করলে ৩০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এক অদৃশ্য কারণে রাস্তা হচ্ছে না। আমরা আজ মানববন্ধন থেকে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যদি এই মাসের মধ্যে কাজ শুরু না হয়, তবে আগামী ৩০ জুলাই সবাই মিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।’

কোনাবাড়ী জরুন এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘কোনাবাড়ী থেকে বাঘবাড়ি পর্যন্ত সড়কটি পাঁচজন কাউন্সিলরের এলাকা। এই পাঁচজন মিলেও এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক মেরামত করতে পারছেন না, এটা খুবই দুঃখজনক।’

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সড়কটির দৈর্ঘ্য আট কিলোমিটার। ২০১৬ সালে সড়কটির কোনাবাড়ীর দিক থেকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত আরসিসি ঢালাই করা হয়। ওই অংশের দুই পাশে নালাও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বাকি অংশে কাজ হয়নি। ফলে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দিন দিন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে সড়কটি। কোথাও কোথাও পানি জমে জলাশয়ের মতো হয়ে আছে।

মহানগরীর শেষ সীমানা সুরাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের নানা কাজে কোনাবাড়ী ও গাজীপুর শহরে যেতে হয়। এখন এলাকার ভেতর দিয়ে কিছু রাস্তা আছে যেগুলো কিছুটা চলাচলের উপযোগী, সেদিক দিয়ে অনেক ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় অপচয় করতে হচ্ছে, আবার খরচও বেশি হচ্ছে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, কোনাবাড়ী বাজার এলাকার মাঝামাঝি থেকে কাশিমপুরের দিকে একটি সড়ক চলে গেছে। সড়কটির বেহাল হলেও অনেক যানবাহন চলাচল করছে। সড়কটির শুরুতে সামান্য একটু সড়ক করা হয়েছে আরসিসি ঢালাই। বাকিটুকুর অবস্থা একেবারে নাজেহাল। এ সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই কাশিমপুর থানা। থানার সামনেই সড়কের বড় গর্তে জমে আছে হাঁটুপানি।

কাশিমপুর এলাকায় কথা হয় অটোচালক আফসার উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিদিন এই সড়কে অন্তত সাত-আটটি অটোরিকশা উল্টে যায়। তখন যাত্রীদের কাদামাটিতে একাকার অবস্থা হয়।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সড়কের কোনাবাড়ী থেকে যমুনা কারখানা পর্যন্ত পড়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর পর থেকে জরুন নামাপাড়া পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়ক পড়েছে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখান থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক রয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখান থেকে বাঘবাড়ি এলাকা পর্যন্ত পড়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে।

সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ের (জোন-৮) নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম হারুনুর রশিদ বলেন, নানা জটিলতার কারণে সড়কটির কাজ আটকে আছে। সেই সব জটিলতা কাটিয়ে উঠলেই সড়কটির নির্মাণকাজ আবার শুরু হবে।