কুড়িগ্রাম-৩ আসনে অস্বস্তিতে জাপা, এরশাদের ভাগনিসহ মনোনয়ন চান ৬ জন

জাতীয় পার্টি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে জাপার ঢাকার কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে ছয়জন ফরম কিনেছেন। জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাগনি ও নীলফামারীর বাসিন্দা মেহে জেবুন নেছা রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। এ কারণে দলে অস্বস্তি আছে।

উলিপুর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, ‘জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে মনোনয়ন পেলে বিজয় নিশ্চিত, তাই যদুমধু সবাই প্রার্থী হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেরে গেছে, তারাও এমপি হওয়ার চায়। নিজ ইউনিয়নের বাইরের মানুষ চেনে না, এরাও এমপি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করি দিছে। তবে সঠিক লোককে মনোনয়ন না দিলে এবারে এই আসনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হবে।’

কুড়িগ্রাম-৩ আসনে মোট ১৩টি ইউনিয়ন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৫ জন। ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চারবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং দুবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মতিন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিরোধ ও বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম করায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এম এ মতিনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ গেছে। এ সুযোগে জাপার একাধিক প্রার্থী এ আসনে মনোনয়নপত্র কিনে প্রার্থিতা পেতে উঠেপড়ে লেগেছেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী চিকিৎসক জেবুন নেছা রহমান স্থানী মানুষের কাছে ‘বহিরাগত প্রার্থী’ হিসেবে পরিচিত। ভোটারদের কেউ কেউ বলছেন, এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন করেছিলেন। সেই বিবেচনায় এখানে পরিবারতন্ত্র কায়েম করতে জেবুন নেছা রহমানকে দলীয় প্রার্থী করা হতে পারে।

এদিকে দলীয় মনোনয়ন পেতে উলিপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব ও হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান বি এম আবুল হোসেন মাঠে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ী আবুল বাশার, পান্ডুল ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, স্থানীয় বাসিন্দা আনিছুর রহমান ও সাফা গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তাঁরা সবাই নবীন প্রার্থী হলেও কিছুদিন ধরে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে নিজেদের তুলে ধরছেন।

জেবুন নেছা রহমান ও আবদুস সোবহানের নাম ভোটারদের মুখে বেশি আলোচিত হচ্ছে। তবে দুজনই এলাকায় নবীন মুখ। এরই মধ্যে জেবুন নেছা রহমান এলাকায় এসে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আর আবদুস সোবহান এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ হতদরিদ্র মানুষকে সহযোগিতার মাধ্যমে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। এলাকায় আনিছুর রহমানের পদচারণ তুলনামূলক কম। পান্ডুল ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বেশি পরিচিত নন। জাতীয় পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচিত আবুল বাশার।

কুড়িগ্রাম-৩ আসন জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে উল্লেখ করেন উলিপুর জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব বি এম আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানকার নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে উপজেলায় জাতীয় পার্টির এই অবস্থা তৈরি করেছেন। আজ হঠাৎ বাইরে থেকে এসে নির্বাচন করতে চাইলে তো আমরা মানব না। প্রয়োজনে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী দেব, তবু বহিরাগত কাউকে এই আসনে আমরা চাই না।’