সাতক্ষীরায় ধর্ষণ ও সন্তানকে অস্বীকার করার দায়ে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

আদালত
প্রতীকী ছবি

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ ও ঔরসজাত সন্তানকে অস্বীকার করার মামলায় মিলন গাজী (৪২) নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার বেলা একটার দিকে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জি আযম এ রায় ঘোষণা করেন। ওই আসামি পলাতক রয়েছেন।

রায়ে বিচারক উল্লেখ করেছেন, ধর্ষণের ফলে ভূমিষ্ঠ সন্তানটি আসামি মিলন গাজী ও ওই নারীর ছেলে হিসেবে পরিচিত হবে। বয়স ২১ বছর না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। এ ছাড়া আসামি মিলন গাজীর যদি সম্পদ থাকে, সেখান থেকে ভরণপোষণের অর্থ আদায় করা হবে। যদি না থাকে, সে ক্ষেত্রে আসামি ভবিষ্যতে যদি কোনো সম্পদের মালিক হন, সেখান থেকে সরকার আদায় করতে পারবে।

মামলার রায়ের বিষয়টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি জহুরুল হায়দার নিশ্চিত করেছেন। সাজাপ্রাপ্ত মিলন গাজী সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বাসিন্দা।

২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন আসে আদালতে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিশুটি আসামি মিলনের ঔরসজাত সন্তান।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেশী এক নারীকে মিলন গাজী মক্তবে যাওয়া-আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিতেন। ওই নারী তা প্রত্যাখ্যান করতেন। একপর্যায়ে ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ওই নারীকে ধর্ষণ করেন মিলন। এ সময় ওই নারীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে এ কথা গোপন করতে বলেন। তারপর থেকে ওই নারীর সঙ্গে মিলন গাজী একাধিকবার মিলিত হন। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে ওই নারী বিয়ের জন্য বললে মিলন গাজী প্রত্যাখ্যান করেন। এ নিয়ে ওই বছর ৯ অক্টোবর ওই নারীর বাড়িতে সালিস বৈঠক বসে। সেখানে মিলন গাজী ওই নারীর গর্ভের সন্তান তাঁর নয় বলেন। পাশাপাশি তাঁকে বিয়ে করবেন না বলে জানিয়ে দেন।

এ ঘটনার পর ওই বছর ১৩ অক্টোবর ওই নারীর বাবা বাদী হয়ে মিলন গাজীকে আসামি করে সাতক্ষীরা আদালতে একটি ধর্ষণের মামলা করেন। ২০১২ সালে ওই নারী একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। আসামি আদালতে জামিন প্রার্থনা করলে তা নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় আসামি মিলন গাজীর পক্ষে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালত ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দেন। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে আসার আগেই আসামি আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন আসে আদালতে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিশুটি আসামি মিলনের ঔরসজাত সন্তান। পরে আদালত পাঁচজন সাক্ষীকে জেরা ও জবানবন্দি গ্রহণ করে আজ দুপুরে রায় প্রদান করেন।