নির্বাচন তো হতেই হবে, তবে তা সংস্কারের পর: সারোয়ার তুষার

নরসিংদীতে ছোটকাগজ ‘চিন্তাস্বর’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সারোয়ার তুষার। শনিবার বিকেলে নরসিংদী সরকারি কলেজ মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, ‘“আপনারা সংস্কার করবেন কেন, নির্বাচন দিন, আমরা এসে সংস্কার করব” যাঁরা এ কথা বলেন, আমরা তাঁদের কেন বিশ্বাস করব? আপনারা আমাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। শুধু নির্বাচনের জন্য জনগণ রক্ত দেয়নি। নির্বাচন তো হতেই হবে, তবে তা সংস্কার হওয়ার পর।’

নরসিংদীতে নতুন ছোটকাগজ ‘চিন্তাস্বর’-এর ‘দেয়ালের সংবিধান’ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে সারোয়ার তুষার এসব কথা বলেন। আজ শনিবার বিকেল চারটায় নরসিংদী সরকারি কলেজ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ চারজনের পরিবারের সদস্য, আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক, শহরের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা শিক্ষার্থীসহ শতাধিক তরুণ-যুবক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

সারোয়ার তুষার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে। সংবিধানের অর্থ হচ্ছে, জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছার বাস্তবায়ন। যখন সংবিধান জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন ওই সংবিধান নিজেই নিজেকে বাতিল করে দেয়। গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে দেশের জনগণ যখন ভুক্তভোগী ছিল, এই সংবিধান তখন কোনো নিরাপত্তা দেয়নি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নরসিংদী শহরের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিগুলো বাছাইয়ের পর ‘দেয়ালের সংবিধান’ নামে সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে। মোড়ক উন্মোচন করেন সারোয়ার তুষার, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার ও চার শহীদ পরিবারের সদস্যরা। পত্রিকাটির চার সম্পাদক হলেন বালাক রাসেল, মমিন আফ্রাদ, রুদ্র রাজিব ও মাইনুল রহমান খান।

সারোয়ার তুষার তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেয়ালে দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিগুলোর সবই তরুণদের আঁকা। এতে মনের কথাগুলো সেখানে লিখেছেন তাঁরা। এর মাধ্যমে তরুণেরা কী চান, বোঝা যায়। যাঁরা বলেন, ‘সংবিধান বাতিল করে দিলে কীভাবে চলবে?’ তাঁরা আসলে বুঝতে পারেন না, তরুণেরা তাঁদের অভিপ্রায় লিখে দিয়েছেন। জনগণও এর সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন। গত তিনটি নির্বাচন কীভাবে হয়েছে, সবাই দেখেছেন। গুম-খুন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। কোনোটিতেই এই সংবিধান জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে পারেনি। এ কারণে জনগণ এই সংবিধান বাতিলের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

‘কিংস পার্টি’ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির এই নেতা বলেন, ‘আগের সব অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখেছি, ৬৯-এ আসাদ, ৯০-এ নূর হোসেন জীবন দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এসে আগের মতো দেশ চালিয়েছে। এ কারণেই অভ্যুত্থানের সুফল জনগণ পায়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি পদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দলের চাপে। অথচ এর দায়ভার নিতে হচ্ছে ছাত্রদের। এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। চাঁদাবাজি করছে বিশেষ রাজনৈতিক দলগুলো। অথচ আবার তারাই আমাদের বলছে কিংস পার্টি। ক্ষমতার মধ্যে থেকে যারা দল গঠন করেছিল, তারাই আমাদের কিংস পার্টি বলছে। সরকারে রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের প্রভাব রয়েছে। এই পরস্পরবিরোধী স্বার্থের সমন্বয়ে গড়া সরকারের পক্ষে কিংস পার্টি করা যায় না। অথচ যাঁরা কিংস পার্টি হয়ে শুরু করেছিলেন, তাঁরাই দেশের মানুষের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আমরা এখনো দল হয়ে আসতে পারি নাই, এসব বলতে শুরু করেছেন। এগুলো গভীর ষড়যন্ত্র। আমাদেরও প্রমাণ করার সুযোগ দিন।’

নরসিংদী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যকরী সদস্য আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, শহীদ চিকিৎসক সজিব সরকারের বাবা হালিম সরকার, শহীদ আমজাদ হোসেনের বাবা আরমান হোসেন খান, শহীদ মো. জুনায়েদের স্ত্রী হাফসা আক্তার, শহীদ তামীম হৃদয় মীরের বাবা তমিজ উদ্দীন মীর।