মৌলভীবাজার পৌরসভা
পলিথিন থেকে কর্কশিট, সব ফেলা হচ্ছে নালায়
বেরি লেকে পানি বাড়ার উৎস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নালায় সব ধরনের আবর্জনা ফেলার বিষয়টি।
বৃষ্টি নেই, তবু মৌলভীবাজার শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বেরি লেকে পানি বেড়ে যায়। লেকের সঙ্গে সংযুক্ত শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কের বেরিরপাড় থেকে ফায়ার স্টেশনের উত্তর অংশের নালায় পানি জমে আছে। পৌর কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নজরে আসে। পানি বাড়ার উৎস খুঁজতে গিয়ে তারা জানতে পারে, পলিথিন, প্লাস্টিক, তার, কর্কশিটসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নালায়।
মৌলভীবাজার পৌর এলাকার বিভিন্ন নালায় আবর্জনা ফেলা বন্ধ হচ্ছে না। বাসাবাড়ির আবর্জনার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে। এতে নালাগুলো ভরাট হয়ে উঠছে। পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী, কর্কশিট, পুরোনো কাপড়, জুতাসহ এমন কোনো অব্যবহৃত জিনিস নেই, যা নালায় ফেলা হচ্ছে না। পানির সঙ্গে এই আবর্জনা গিয়ে পড়ছে শহরের পানিপ্রবাহের একমাত্র মাধ্যম কোদালীছড়াতে। এতে শুধু শহরের ভেতরের পাকা নালাই ভরাট হয়ে উঠছে না, কোদালীছড়াও ভরে উঠছে। কয়েক বছর আগেও বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টি হলেই শহরের নিচু এলাকা ডুবে যেত। পরে পৌরসভা, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের অংশগ্রহণে কোদালীছড়া খনন করা হয়। এরপর নিয়মিত কোদালীছড়া সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে করে তিন-চার বছর ধরে বর্ষায় এখন আর আগের মতো জলাবদ্ধতা হচ্ছে না।
সম্প্রতি হঠাৎ করে শহরের বেরি লেকে পানি বেড়ে যায়। বেরি লেকের সঙ্গে সংযুক্ত শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কের বেরিরপাড় থেকে ফায়ার স্টেশনের উত্তর অংশের নালায় পানি জমে ওঠে। আবার ফায়ার স্টেশনের দক্ষিণ দিক শুকনো। এই পানি বৃদ্ধির বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পানি বাড়ার উৎস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আবর্জনার ফেলার বিষয়টি।
পৌর কর্তৃপক্ষ গত বুধবার থেকে শ্রীমঙ্গল সড়ক এলাকার নালা পরিষ্কার শুরু করে। বেরিরপাড় এলাকা থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়। বেরিরপাড় থেকে কোদালীপুল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় এই অভিযান চালানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, বেরিরপাড় থেকে ফায়ার স্টেশন এলাকার অনেক স্থানে নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা তুলে সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এই স্তূপের মধ্যে চিপস ও বিস্কুটের খালি প্যাকেট, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ছাড়া আরও আছে পলিথিন, প্লাস্টিক পণ্য, তার, কর্কশিট, ইটের খোয়া, কাঠের টুকরা, পেরেক-রড ভাঙা, বস্তাসহ বিভিন্ন বর্জ্য। বিভিন্ন স্থানে ব্যাগ, জুতাও আটকে আছে।
এলাকার চারটি ইলেকট্রনিকস–সামগ্রীর দোকানমালিকেরা বলেন, নতুন পণ্য আসে। তখন হয়তো ছেঁড়া কার্টন আর কর্কশিট নালায় ফেলে দেওয়া হয়। আর সেগুলো যে রশি দিয়ে বাঁধা থাকে, সেগুলো হয়তো কেউ ফেলে দেন। এর পর থেকে খেয়াল রাখবেন। পৌরসভার লোকজন তো আর সব আবর্জনা তুলে নিয়ে যায় না। কিছু কিছু জমা থাকে।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন এলাকার জন্য নির্দিষ্ট পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত আছেন। তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাকে করে নিয়মিত আবর্জনা নিয়ে যান। নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা রাখার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও লোকজন নালার মধ্যে আবর্জনা ফেলে দেন।
পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, শ্রীমঙ্গল সড়কে অনেকগুলো ফ্রিজ, এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র), ইলেকট্রনিকস–সামগ্রীর দোকান আছে। ফার্মেসি আছে। নালার আবর্জনাগুলো এসব দোকানের। শ্রীমঙ্গল রোড থেকে প্রতিদিন দুই ট্রাক আবর্জনা নেওয়া হয়। তারপরও অনেকে নালার মধ্যে আবর্জনা ফেলছেন। এই এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বন্ধ করতে পারেননি। পুরো নালা আটকে গেছে। মানুষ সচেতন না হলে পৌরসভার পক্ষে সবকিছু পরিষ্কার রাখা কঠিন।