পঞ্চগড়ে জেলা জজসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ

পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে এবং সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড় জেলা। আজ বুধবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের সামনেছবি: প্রথম আলো

নিয়োগ–বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও হুমকির অভিযোগে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ হয়েছে। এমনকি এই চার বিচারককে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

বুধবার দুপুরের পর পঞ্চগড় জেলা জজ আদালত চত্বরের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড় জেলা এই বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে জেলা জজ আদালতের সামনে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পাশে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

মিছিল ও সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা, ‘মানিক গেছে যে পথে, ফারুক, মেহেদী যাবে সে পথে’, ‘সন্ত্রাসী লীগের ঠিকানা, এ বাংলায় হবে না’, ‘দুর্নীতিবাজদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’ লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের অন্যতম সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, সহসমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান, মনিরুজ্জামান ফয়সাল প্রধান, মোজাহার ইসলামসহ ছাত্রনেতারা বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, পঞ্চগড় আদালতের জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম ফারুক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুজ্জামান ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হেনা সিদ্দিকী এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করছেন। আগস্ট বিপ্লবের পরও তাঁরা ঘুষ, দুর্নীতি ও নিয়োগ–বাণিজ্য করছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় ছাত্র সমন্বয়কদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পরও যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই চার বিচারককে অপসারণ করা না হলে আদালত ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।

ছাত্র সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী তাঁর বক্তব্যে বলেন, জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুকসহ ওই চার বিচারক আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট। পঞ্চগড় আদালতের কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি করে সাবেক আইনমন্ত্রীর এলাকার লোকদের বারবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বাড়িভাড়া নেওয়া সত্ত্বেও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল ও অন্য দুই বিচারক চিফ জুডিশিয়াল আদালত ভবনে বাসভবন বানিয়েছেন। হাসিনার সময়ে প্রশাসনের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হলেও তাঁর দোসর এই বিচারকদের এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এখনো নিয়োগ–বাণিজ্য ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমাদের একটি গোষ্ঠীর উল্লেখ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই চার বিচারককে সরিয়ে নেওয়া না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে আমরা আবারও রক্ত দেব। তবু পঞ্চগড়ের মাটিতে আর অন্যায়–দুর্নীতি হতে দেব না।

উল্লেখ্য, গত ২০ ডিসেম্বর পঞ্চগড়ের মকবুলার সরকারি কলেজে পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামেন পরীক্ষার্থীরা। ওই দিন তোপের মুখে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মচারী নিয়োগের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর ৪ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তার কার্যক্রমও স্থগিত করে নিয়োগ কমিটি।
এদিকে বিচারকদের বিরুদ্ধে এমন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জমিরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।