জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারের পদত্যাগের দাবিতে তাঁদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখা সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের পদত্যাগের দাবি জানান এবং পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে রাখার হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় তাঁরা ওই দুজনের নেমপ্লেটও ভেঙে ফেলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘গত ১৫ জুলাই রাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ বর্বর হামলা চালায়। ওই হামলায় ছাত্রলীগের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সরাসরি জড়িত ছিল। ওই ঘটনার প্রতিবাদে গত সপ্তাহে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য (শিক্ষা), প্রক্টরসহ কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেননি। আমরা তাঁদেরও পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলাম কিন্তু তাঁরা পদত্যাগ করেননি। তাই আমরা আজ তাঁদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা পদত্যাগ না করবেন, ততক্ষণ আমরা তালা ঝুলিয়ে রাখব।’
এর আগে ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. নূরুল আলম ও সাবেক চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার আবু হাসান পদত্যাগ করেন। পরে ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ পদত্যাগ করেন।
দর্শন বিভাগের অধ্যাপকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আজ দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার–সংলগ্ন সড়ক ঘুরে শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সমাবেশ করেন তাঁরা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানান। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান তাঁরা।
সমাবেশে দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী রিফাত মিয়া বলেন, ‘১৭ জুলাই ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার পর দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে সম্বোধন করেছেন। একজন শিক্ষক কখনোই কোনো শিক্ষার্থীকে রাজাকার বলতে পারেন না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ইন্ধন ও মদদদাতা দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদকে দর্শন বিভাগের সব সাধারণ শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। লেজুড়বৃত্তিক স্বৈরাচার শাসকের সমর্থনকারী একজন শিক্ষক হিসেবে দর্শন বিভাগে তাঁর কোনো ঠাঁই নেই। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে যেন এমন শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন, অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম খন্দকার ও অধ্যাপক শারমিন সুলতানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তাঁরা ১০ দফা দাবি জানিয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সালাউদ্দিন বরাবর একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার সময় ওই তিন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও নিরাপদ আশ্রয় না দেওয়া, শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া, পরবর্তী সময়ে এ ঘটনার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না দেওয়া, এমনকি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের শেষ পর্যন্ত গণহত্যার আসামি ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন জানানো সর্বোপরি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি আলোচনা সাপেক্ষে মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা করেছেন তাঁরা।