সচ্ছলতা ফেরাতে গিয়েছিলেন প্রবাসে, ফিরলেন লাশ হয়ে

রাজন মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর জন্য ঋণ করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন রাজন মিয়া (৩২)। স্বজনেরা সুখের আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনা তাঁর জীবনে কাল হয়ে আসে। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান রাজন। নানা প্রচেষ্টায় সাড়ে পাঁচ মাস পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজনের লাশ দেশে আনা হয়েছে।

রাজন মিয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বাহের বানাইল গ্রামের মো. ইদ্রিস আলীর বড় ছেলে। ১ জানুয়ারি কর্মস্থলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান তিনি। গতকাল বিকেলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে তাঁর লাশ। স্বজনেরা ওই দিন সন্ধ্যার পর লাশটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। রাত ১০টার দিকে জানাজা শেষে বাড়ির সামনে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।

রাজনের ছোট ভাই মাদ্রাসাশিক্ষক হোসাইন আহমেদ বলেন, ১ জানুয়ারি গোসলের পর লুঙ্গি শুকাতে গিয়ে তাঁর ভাই জেনারেটরের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে যান।  তাঁর ভাইয়ের সহকর্মী সাইফুল ইসলাম তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হোসাইন আহমেদের অভিযোগ, নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের অসহযোগিতার কারণে তাঁর ভাইয়ের লাশ দেশে আনতে সাড়ে পাঁচ মাসের বেশি সময় লেগেছে। এ ছাড়া ভাইয়ের মৃত্যুতে কোনো সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। লাশ দেশে আসার পর দাফন-কাফনের খরচের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

নিহত রাজনের স্বজনেরা জানান, ১৭ মাস আগে শ্রমিকের ভিসা নিয়ে রাজন সৌদি আরবে যান। জেদ্দার জিদান শহরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ পান। ১৭ মাস হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের ২ লাখ টাকার মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। এ ছাড়া গ্রামের কিছু লোকের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করেন।

ছেলের মৃত্যুতে মা হাজেরা খাতুন ভেঙে পড়েছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ছেলেটি পরিবারের প্রতি এত দায়িত্বশীল ছিল যে মৃত্যুর আগের দিনও দেশে টাকা পাঠিয়েছে। সেই টাকা এখনো ব্যাংকে পড়ে আছে। অথচ তাঁর ছেলে লাশ হয়ে বাড়িতে আসছে। এরপর আর কথা বলতে পারেননি হাজেরা।

বাড়ির ভেতরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন রাজনের স্ত্রী সোমা আক্তার। কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না তিনি। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। রাজন মিয়ার দুই সন্তান অলিউল্লাহ আহসান (৮) ও সায়মা আক্তার (৩) এখনো বুঝতে পারছে না তাদের বাবা আর পৃথিবীতে নেই।