আশুলিয়ার একটি কারখানার ৪২ শ্রমিক অসুস্থ

সাভারের আশুলিয়ার একটি তৈরি পোশাক কারখানার ৪২ শ্রমিক কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁদের আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। বুধবার রাত নয়টার দিকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় একটি তৈরি পোশাক কারখানার ৪২ শ্রমিক কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অসুস্থ শ্রমিকদের দাবি, সন্ধ্যার পর হঠাৎ ঝাঁজালো গন্ধে চোখ জ্বালাপোড়া করতে থাকে। অনেকে মাথা ঘুরে পড়ে যান। বমিও করেন কেউ কেউ। তবে কোনো ধরনের গ্যাসের ধোঁয়া দেখতে পাননি কেউ।

আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক কৌশিক বাকের প্রথম আলোকে বলেন, অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অসুস্থতার প্রকৃত কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে প্রাথমিকভাবে এটি গণমনস্তাত্ত্বিক সমস্যা বলে মনে হচ্ছে।

আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আশুলিয়ার ইয়ারপুরের গোরাট এলাকার অরবিটেক্স নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা অসুস্থ পড়েন। পরে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের কয়েক দফায় হাসপাতালে আনা হয়। কারখানার ৪২ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এলাকাটিতে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হঠাৎ সন্ধ্যার পর কারখানা থেকে অসুস্থ শ্রমিকদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিতে যেতে দেখেন তাঁরা।

ওই কারখানার এক অপারেটর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ধ্যা ছয়টার পর হঠাৎ গন্ধ পাই। নাকমুখ জ্বলতেছিল আর মাথা ঘুরাইয়া বমি আসতেছিল। কাজ করার মধ্যেই একজন একজন করে পড়ে যাচ্ছিল। সব ফ্লোরেই এমন হইছে।’

এক অপারেটরের বরাত দিয়ে তাঁর স্বামী প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যার দিকে ১০ মিনিটের জন্য কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজ করতে বলে। এ সময় তিনি নিচের ফ্লোরে এসে দেখেন, অন্যরা কাজ করছেন। পরে তাঁরা কাজ শুরু করেন। একটু পর ছুটি দেওয়া হয়। তখন বের হতে গিয়ে তিনি জ্ঞান হারান।

ওই কারখানার এক কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দেখি, ১৩ নম্বরে (সিরিয়াল) একজন পড়ে গেছে। সবাই তারে নিয়া ব্যস্ত হলে দেখি, ১০ নম্বরের আরেকজন পড়ে গেল। সবাই নাকমুখে কাপড় দিছে। উল্টা সাইডে গ্যাস মারছে। আমার বমির মতে আসলে আমি নাক ধইরা ওয়াশরুমে গেছি। এরপর ফিরা আইসা দেখি, আরেকজন পড়ছে। এরপর আমি জ্ঞান হারাই।’

কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, কয়েকজন মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসি। কী কারণে এমন হলো আমরা এখনো জানতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোথাও কোনো গ্যাস ছাড়া হয়নি। তিনতলার একটি ফ্লোরে এমনটি হয়েছে। ওরা কাজ বন্ধ করে কাজ করতে না চাইলে আমরা বুঝাইয়া ওদের কাজ করাই। এর আধা ঘণ্টা পর থেকেই এ সমস্যা হয়। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দুপুরের পর এই ফ্লোরের লোকজন আর কাজ করতে চায়নি। বিকেল পাঁচটায় তাদের বুঝালে কাজে যোগ দেয়। এরপর কয়েকজন অসুস্থতার কথা বললে বাকিরা আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে যায়।’